ভেটিং শব্দটার মানে জেনেছিলাম বাংলাদেশ টেলিভিশন সংক্ষেপে বিটিভিতে গিয়ে।
জীবনের বড় একটা সময় বিটিভির সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি–বিটিভির ভেটিং আসলে যতোটা কাগজে-কলমে, তারচে বেশি প্রডিউসার বা কর্মকর্তাদের মনন ও মগজে। অদৃশ্য একটা জুজুর ভয়ে তাঁরা দিশেহারা থাকেন। ফলে তাঁদের মনোজগতের দরোজা জানালাগুলোর অধিকাংশই থেকে যায় বন্ধ। সেলফ্ সেন্সরশীপ নামক এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে তাঁরা আক্রান্ত থাকেন সারা বছর। (দু’একটা ব্যতিক্রম যে নেই তা বলবো না।)
দু’টি ঘটনা বয়ান করি।
ঘটনা নাম্বার ওয়ান। উদ্দিষ্ট ব্যক্তি আতিকুল হক চৌধুরী। স্থান বিটিভি অডিটোরিয়াম,রামপুরা। সময়কাল ১৯৮৯। (বিটিভির ২৫ বছর)।
বিটিভির রজত জয়ন্তী উপলক্ষ্যে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে বিষয় করে একগুচ্ছ বিশেষ অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচারের পরিকল্পনা করেছিলো বাংলাদেশ টেলিভিশন। আমার ওপর পড়েছিলো ছোটদের অনুষ্ঠান নির্মাণের দায়িত্ব। প্রযোজক হিশেবে পেয়েছিলামতখনকার স্মার্ট প্রযোজক ফখরুল আবেদীন দুলালকে।
সেই মোতাবেক আমার রচনা ও নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ বিষয়ক ছোটদের একটা বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং চলছে। ওখানে ছোট্ট একটা নাট্যাংশে অভিনয় করছেন ওবায়দুল হক সরকার এবং মিরানা জামান। জায়নামাজে বসে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া পুত্রের জন্যে দোয়া করছেন মা মিরানা জামান। আর আশাবাদী পিতা ওবায়দুল হক সরকার মিরানা জামানকে সাহস যোগাচ্ছেন–তুমি দেখে নিও, আমাদের খোকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনিকে পরাজিত করে বীরের বেশে ফিরবে একদিন। (এর কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তানি সেনারা সেই ঘরে ঢুকে ‘মুক্তি কি ধার মুক্তি কিধার? তুমহারা ল্যাড়কা মুক্তিমে গেয়া? মুক্তি কিধার?’ বলতে বলতে গুলি ও বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করবে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের বাবামাকে।)
মা-বাবার কথোপকথনের দৃশ্যটা রেকর্ডিং-এর সময় প্রডিউসার প্যানেল থেকে টকব্যাকে স্টুডিওতে থাকা আমার উদ্দেশ্যে প্রযোজক ফখরুল আবেদীন দুলাল বললেন–রিটন,আব্বা,(দুলাল খুব কাছের জনদের এই সম্বোধনে কথা বলতেন) পাকিস্তানি হানাদার কওন যাইবো না। তুই ঐ শব্দটা বাদ দিয়া আবার এরেঞ্জ কর দৃশ্যটা।
আমি তো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলাম–কী বললেন? পাকিস্তানি হানাদার বলা যাবে না?
–না যাবে না। আর কথাটা আমি বলি নাই। স্যারে বলছেন। আতিক ভাই বলছেন।
–কোন আতিক ভাই?কে আতিক ভাই?
–আতিক ভাই মানে আতিকুল হক চৌধুরী।
–গুল্লি মারেন আতিক ভাইয়ের। পাকিস্তানি হানাদারই যাইবো।
–গুল্লি মারন যাইবো না আব্বা। আতিক ভাই আমার পিছনেই খাড়ইয়া আছেন।
আমি বললাম, ওকে আমি আসছি ওপরে।
তারপর শ্যুটিং বন্ধ রেখে খুব দ্রুত আমি চলে গেলাম রেকর্ডিং প্যানেলে। আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছেন আতিকুল হক চৌধুরী।
উত্তেজিত আমি সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম,
–আপনি বলছেন এই কথা আতিক ভাই! পাকিস্তানি হানাদার বলা যাবে না! বিটিভির সমাজসচেতন বিখ্যাত নাট্যকার প্রযোজক আতিকুল হক চৌধুরী বলছেন পাকিস্তানি হানাদার বলা যাবে না!!
অসহ্য একটা বাঁকা হাসি(হাসলে আতিক ভাইয়ের মুখ এমনিতেই কিছুটা বাঁকা হয়ে যায়) হেসে আতিক ভাই বললেন,
–শুধু হানাদার বলা যাবে। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বলা যাবে না। নিউজে নিশ্চয়ই খেয়াল করেছো তুমি।
–ওই হানাদারগুলো কি তাহলে মঙ্গল গ্রহ থেকে এসেছিলো আতিক ভাই?ভাসুরের নাম বলা বারণ! বললাম আমি।
–সরি রিটন তুমি আমার ওপর রেগে যাচ্ছো। আমি কিন্তু বলিনি শব্দটা বাদ দিতে। আমি শুধু এই বিষয়ে অফিসিয়াল সিদ্ধান্তটা কনভে করেছি দুলালকে এবং সঙ্গে তোমাকে। কনভে শব্দটা আবার দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করলেন তিনি প্রলম্বিত উচ্চারণে। তারপর বললেন, এখন মানা না মানা তোমাদের ব্যাপার।
বলতে বলতে নিজের কক্ষের দিকে হাঁটা ধরলেন আতিক ভাই।
প্যানেল চেয়ার থেকে উঠে দুলাল ভাই আমার হাত চেপে ধরলেন,
–আব্বা আমার চাকরি খাইয়া লাইবো আতিক ভাই। তুই জানোস না কতো হারামি অরা। তর দুইডা পায় ধরি। জিদ করিস না। পাকিস্তানি শব্দটা না গেলেও কিচ্ছু হইবো না। তর প্রোগ্রাম হিট।
মন খারাপ করে নিচে নেমে এসে ওবায়দুল হক সরকার এবং মিরানা জামানকে সরি বলে পাকিস্তানি শব্দটা ফেলে দিয়ে নাট্যাংশসহ বাকি আইটেমগুলোর রেকর্ডিং শেষ করলাম।
সব শেষে কিছু ইনসার্ট নেবো বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কয়েকটা এলবাম একটা চেয়ারে রেখে পাতার পর পাতা শ্যুট করছি। বঙ্গবন্ধুর বেশ কিছু ছবি শ্যুট করছি দেখে টকব্যাকে দুলাল ভাই ফের আমাকে সতর্ক করলেন–আব্বা এতোগুলা বঙ্গবন্ধু দিয়া কী করতাম! দিতে তো পারবি না। ভেটিং-এ পড়বি তো আব্বা।
আমি বললাম, আরে ভাই আপনে রেকর্ডিং তো করেন! দিতে না পারলে দিমু না। কিন্তু রেকর্ড কইরা রাখি। এতোগুলা এলবাম আনছি।
–আব্বায় একটা বাঘের বাচ্চা। বলতে বলতে ফের শ্যুট করা শুরু করলেন দুলাল ভাই।
স্ক্রিপ্টের একটা অংশে উপস্থাপকের নেপথ্য কণ্ঠে আমার লেখা ‘ছড়াও ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ’ বইয়ের ”সাতই মার্চ,১৯৭১” নামের ছড়াটার—-
একাত্তরে ঘটলো ব্যাপার অন্য
একটি স্বাধীন আবাসভূমির জন্য
সবার মুখে একটি মাত্র উক্তি
লড়াই ছাড়া আসবে না তো মুক্তি।
সাতই মার্চে উথালপাথাল দেশটা
চাইলো সবাই দেখতে খেলার শেষটা
লোকারণ্য রেসকোর্স মাঠ রমনা
স্বাধীনচেতা মানুষ তো আর কম না
সমাবেশে শেখ মুজিবুর দাঁড়িয়ে
বজ্রকণ্ঠে বলেন যে হাত বাড়িয়ে–
এবারের সংগ্রাম
মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম
স্বাধীনতার সংগ্রাম।”–এই অংশটায় বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্পাদনার সময় ইনসার্ট করার জন্যেই রেকর্ড করিয়ে নিচ্ছিলাম ছবিগুলো। কিন্তু ফখরুল আবেদীন দুলাল বলে রাখলেন–এইছবিগুলি কিন্তু দেওন যাইবো না আব্বা।
আমি বললাম, আচ্ছা। ঠিক আছে। দিমু না।
দু’দিন পর পুরো অনুষ্ঠানটা এডিটিং-এর সময় প্রযোজক দুলাল আমাকে সঙ্গ দিলেন সারাক্ষণ। সঙ্গ দিলেন না বলে বলা উচিৎ চোখে চোখে রাখলেন বা পাহারা দিলেন। এডিটিং-এর সময় বঙ্গবন্ধুর ছবিগুলো আমি বসিয়ে দিই কী না সেটা দেখার জন্যেই তিনি লেগে থাকলেন ডাক টিকিটের মতো। সতর্ক থাকলেন খরগোশের মতো।
ব্যাপারটা আগেভাগেই আঁচ করে বিটিভির রেকর্ডিং ও এডিটিং বিভাগের কৃতী সদস্য আমার বন্ধু সালেহ আহমদকে আমার গোপন ইচ্ছের কথাটা বলে রাখলাম। সালেহ আহমদ আমাকে সহযোগিতা করবে বলে কথা দিলো। বললো, দোস্তো চিন্তা কইরো না। তোমার কাজটা খুব রিস্কি হইলেও আমি কইরা দিমু, কথা দিলাম।
তখন বিশাল বড় সাইজের কোয়াড স্পুল(সিনেমার মতো) বা চাক্কিতে-এ রেকর্ড করা হতোঅনুষ্ঠান। একজন সহকারী লিখে রাখতো সকল দৃশ্যের সেকেন্ড-মিনিট-ঘন্টার যাবতীয় হিশেব ঠিকুজি। সম্পাদনার সময় সেই স্পুল চালিয়ে টাইমিং ধরে এগোলে-পেছালেই ধারণকৃত কাঙ্খিত দৃশ্য বা সিকোয়েন্সটি পাওয়া যেতো।
আমাদের সেই অনুষ্ঠানটি সম্পাদনা হয়ে যাবার পর সম্পাদিত স্পুলটির বাকশোর ওপর প্রযোজক দুলাল অনুষ্ঠানের নাম-বিষয়-লেংথ-মিউজিক ট্র্যাক ইত্যাদি বিস্তারিত লিখে সেটা জমা দিলেন কর্তৃপক্ষের কাছে।
রেডি টু অন এয়ার স্পুলগুলো অডিটোরিয়ামের প্যানেল কক্ষেই একটা নির্দিষ্ট স্টিলের আলমিরায় রাখা হতো। সেই আলমিরা সবাই খুলতে পারতো না। এ বিষয়ে গভীর গোপনীয়তা রক্ষা করা হতো কঠোরভাবে। ভাগ্যগুণে সেই টেলিসিন বিভাগেরই সবচে দক্ষ রেকর্ডিস্ট কাম এডিটর কাম ইঞ্জিনিয়ার ছিলো সালেহ আহমদ।
আমার রচিত ও নির্দেশিত অনুষ্ঠানটি প্রিভিউ হয়ে যাবার পর সালেহ তাঁর ম্যাজিকটা দেখালো। পূর্ব নির্ধারিত এক দুপুরে সেই কক্ষের সকল সহকর্মী লাঞ্চ ব্রেকে গেলে আমাকে অবাক করে দিয়ে সালেহ আগেই ওর গোপন ড্রয়ারে তালা মেরে রাখা আমাদের স্টুডিও রেকর্ডিং স্পুলটা বের করে খুব দ্রুত সেটা চালিয়ে আমার কাছে নোট করে রাখা টাইমিং মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ছবিগুলোর জায়গাটা বের করে ফেললো সালেহ। তারপর রেডি টু অন এয়ার আলমিরা খুলে সেখান থেকে আমাদের প্রচারিতব্য স্পুলটা বের করে এনে খুব দ্রুত সেটা এডিটিং টেবিলে সাঁটিয়ে আমার লিখে রাখা টাইমিং অনুসারে ৭ মার্চের সেই ছড়ার সম্পাদিত অংশটায় পৌঁছে আমার নির্দেশনা অনুসারে ক্ষিপ্র গতিতে একটার পর একটা বঙ্গবন্ধুর ছবি যুক্ত করতে থাকলো। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্থিরচিত্র লাগিয়ে রেখেছিলাম আগে।
দম বন্ধ অবস্থা আমাদের দু’জনেরই। কাজটা ভয়ংকর বেআইনী। ধরা পড়লে খবর আছে।
কেউ একজন এই কক্ষে ঢুকে পড়ে ঘটনা দেখে ফেললে এবং সেটা জানাজানি হয়ে গেলে আমি তো ব্ল্যাক লিস্টেড হবোই চিরতরে, সালেহ হয়তো হারাবে তার চাকরিটাই। কিন্তু বিরাট একটা রিস্ক সালেহ নিয়েই ফেলেছে আমার অনুরোধ এবং বন্ধুত্বের দায় এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর ভালোবাসার জোরে। কাজটা করার আগে সালেহ আমাকে বলেছিলো–যদি ধরা পড়ি, যদি চাকরি যায় গা, তুমি আমারে একটা চাকরির ব্যবস্থা কইরা দিও।
বঙ্গবন্ধুর ছবিগুলো জুড়ে দেয়ার পর সালেহ খুব দ্রুত অডিও লেভেল কমিয়ে ছড়াটা ফের চালিয়ে দিয়ে বললো–আবার দেইখা বলো ঠিক আছে কী না। তোমার মন মতো হইছে কী না।
রুদ্ধশ্বাসে দেখলাম। তারপর সালেহকে জড়িয়ে ধরলাম–দোস্তো! তোমার এই অবদান কোনোদিন ভুলুম না!
সালেহ অতি ক্ষিপ্রগতিতে স্পুলটা রিওয়াইন্ড করে একদম শুরুতে এনে সেটা ফের স্টিলের আলমিরাতে জায়গামতো রেখে আলমিরাটা বন্ধ করে দিলো। তারপর চাবিটা লুকিয়ে ফেললো গোপন স্থানে যেটা ওরা মাত্র কয়েকজন সহকর্মী ছাড়া আর কারো জানা থাকে না।
অতঃপর নিজের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখা রেকর্ডিং স্পুলটা হাতে করে আমাকে সঙ্গে নিয়ে নিশ্চিন্তে হেঁটে হেঁটে অনেক দূরেরকন্ট্রোল রুমেরপ্রেজেন্টেশন বিভাগের নির্দিষ্ট কক্ষের নির্দিষ্ট জায়গায় সেটা রেখে দিলো সালেহ। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে মিষ্টি একটা হাসির রেখা টেনে বললো, তুমি রিকোয়েস্ট করার পর এইটারে আগেই চুরি করছিলাম মিয়া নাইলে এইটার উপ্রে অইন্য অনুষ্ঠান রেকর্ড কইরা ফালাইতো কেউ না কেউ। হাহ হাহ হাহ।
সালেহকে কঠিন একটা আলিঙ্গন শেষে আমি বললাম, এইবার চলো ক্যান্টিনে গিয়া খাইয়া আসি শান্তি মতো। দোস্তো তুমিও খাও নাই আমিও খাই নাই।
একটা বিজয়ের হাসি হেসে সালেহ বললো, শালারা কেউ বুঝতেই পারবো না কী কামটাই না করসি আমরা দুইজনে মিল্লা! হাহ হাহ হাহ।
২
ঘটনা নাম্বার টু। উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ফখরুল আবেদীন দুলাল। স্থান বিটিভি প্রেজেন্টেশন বিভাগের কন্ট্রোল রুম। যাকে আমরা বলতাম ডি সাব।
অবশেষে এলো প্রচারের দিন।
সেদিন আমি বিটিভি ভবনে ছিলাম সকাল থেকেই। বিকেলে সালেহ ব্যস্ত থাকবে একটা রেকর্ডিং-এ, তাই ওকে পাবো না। অনুষ্ঠান সম্প্রচারের কয়েক মিনিট আগে আমি আর ফখরুল আবেদীন দুলাল গেলাম প্রেজেন্টেশন বিভাগের খবর পাঠ এবং এনাউন্স স্টুডিও লাগোয়া লম্বা প্যানেলে। ওখানে একের পর এক অনেকগুলো টিভি স্ক্রিন ঝুলে থাকে দেয়াল বরাবর।আমরা অনুষ্ঠান দেখতে এসেছি জানার পর ওখানকার কর্মীরা আমাদের দু’জনকে খুব সম্মান দেখিয়ে বসতে দিলেন নিজেদের চেয়ারে। দুলাল বসেছেন ভেতর দিকে, আমার থেকে তিন চারটা চেয়ার পরে।
অনুষ্ঠান শুরু হলো।
ধাপে ধাপে এক পর্যায়ে এলো আমার ছড়ার সেই অংশটা–সাতই মার্চে…। এবং পর্দাজুড়ে বঙ্গবন্ধুর নানা এঙ্গেলের ক্লোজ আপ এবং লংশটের ছবি একের পর এক দৃশ্যমান হতে থাকলো ছন্দোময় গতিতে। প্রেজেন্টেশন বিভাগে থাকা বিটিভির কর্মীরা সকলেই হাত তালি দিয়ে উঠলেন। হতভম্ভ দুলাল ভাই দ্রুত ঘাড় ঘুরিয়ে এক ঝলক আমাকে দেখে নিয়েই নিজেও শামিল হলেন হাত তালিতে। তারপর রিভল্বিং চেয়ার ঘোরাতে ঘোরাতে দুই হাত উঁচু করে তুলে ধরে অপরূপ হাস্যোজ্জ্বল মুখে চেঁচিয়েউঠলেন–বাঘের বাচ্চা বাঘের বাচ্চা দিয়া দিসি দিয়া দিসি! (অথচ তিনি দেননি! তিনি জানতেনই না এরকম একটা কাণ্ড করে বসে আছি আমি। বরং বঙ্গবন্ধুর ছবি আমি যেনো জুড়ে দিতে না পারি সেই ব্যাপারেই সতর্ক পাহারা দিয়েছিলেন দুলাল ভাই! এখন আমার ফাঁদে পড়ে মুহূর্তেই কী কঠিন ডিগবাজি!)
ততোক্ষণে উপস্থাপকের নেপথ্য কণ্ঠে থাকা আমার ছড়াটা চাপা পড়ে গেছে উপস্থিত সকলের সম্মিলিত উচ্ছ্বসিত ও উচ্চকিত করতালিতে।
আমার দু’চোখ তখন জলে ভরে গেছে। টিভি পর্দায় ভেসে ওঠা বঙ্গবন্ধুর ছবিগুলো খুবই ঝাপসা দেখছি…।
আজকের প্রজন্ম ভাবতেই পারবে না কী দুঃসময় আমরা পেরিয়ে এসেছি। এমনকি ১৯৮৯ সালেও টিভি পর্দায় নিষিদ্ধ ছিলেন বঙ্গবন্ধু।জাতির জনকের ছবি দেখাতেও হতে হয়েছে দুঃসাহসী। কাজ করতে হয়েছে চোরের মতো!
অটোয়া, কানাডা