শুক্রবার - এপ্রিল ২৬ - ২০২৪

ব্যস্ততার দিনগুলি

ছবিগ্রেইগ রাকোজি

লিমা নাকি খুব রাগ দেখাচ্ছে সাজিদ চলে আসার পর থেকে। কোথাও যাচ্ছে না। বাসায় বসে আছে। ওরা বলেছিলেন ও বিদেশে গেছে, চলে আসবে অনুষ্ঠান করে। কিন্তু ওর ঘর ফাঁকা দেখে মনে হয় আন্দাজ করেছে সাজিদ চলে গেছে। আবেদিন আহমেদের অফিসে গেলে এসব কথা জানতে পায়। মনটা খারাপ হয়ে যায়। মেয়েটা কি বোকা নাকি? বোনকে কেউ ভালোবাসতে পারে, বিয়ে করে? নাকি লিমা সত্যি ভালোবাসে সাজিদকে? নানান রকম দ্বন্দ্ব-চিন্তা কাজ করতে থাকে ওর মস্তিষ্কে। আবেদিন সাহেবের ভালোবাসা, মায়ের স্নেহমায়া ছেড়ে আসতে বড় খারাপ লাগছে সাজিদের। কিন্তু মান-সম্মান বজায় রাখার জন্য এই ব্যবস্থাই শ্রেয়। কিছুদিন কষ্ট হবে। এরপর ঠিক হয়ে যাবে। লিমাটাও আশা করি বুঝতে পারবে ওর ভুল, শুধরাবে নিজেকে। এখুনি যাবো না। কিছুদিন পর যাবো ও বাড়িতে। সাজিদ নিজের মতন পরিকল্পনা করে, যদিও ও-বাড়ির ইট কাঠ চুন সুরকি পর্যন্ত ওকে ডাকছে।
ক’দিন খুব মনমরা হয়ে শুয়ে শুয়ে কাটিয়ে দিল সাজিদ। একদিন উঠে মার্কেটে ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র দেখল, জিনিসপত্র কিনে এনে বাড়ি সাজাল। এবার আবেদিন সাহেবকে আর মাকে আসতে বলবে। লিমাকে কিছুতেই বলা যাবে না বাড়ির ঠিকানা। তাহলে সে এখানে এসে ঝামেলা শুরু করবে।
সব গুছিয়ে উঠার আগেই গানের কনসার্ট করতে চলে গেল দেশের বাইরে। এভাবেই চলে যাচ্ছে ব্যস্ততার দিনগুলি।
নতুন সিডি, নতুন এ্যালবাম। একটা রুমে মিউজিক সিস্টেম করে নিয়েছে। গান লেখা, সুর করা নিয়ে মেতে থাকে। কাজের বাইরে নিরবচ্ছিন্ন এক দ্বীপের অধিবাসী যেন সাজিদ। পারিবারিক যে বন্ধনটা ওকে কষ্ট দিচ্ছিল আস্তে আস্তে ভুলে যায় সে কষ্টটা। বরঞ্চ এই একক জীবনটাই ওর কাছে আদরের হয়ে উঠে দিনে দিনে। লিমাকে অনেক আদর করত। সে মেয়েটা ওর জন্য কতটা অধঃপতনে গেল, না স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেল সে ভাবনার সময় নাই সাজিদের। মাঝে মধ্যে আবেদিন আহমেদের অফিসে যায়, মায়ের পাঠান খাবার দুজনে ভাগ করে খায়। উনিও হঠাৎ কখনো রাতের বেলা এসে বেশ খানিক সময় কাটিয়ে যান ওর সাথে। কখনো নিয়ে আসেন মিসেস আবেদিনকেও। মা বক্স ভর্তি খাবার নিয়ে এসে ফ্রিজ ভর্তি করে রেখে যান। লিমাকে নিয়ে কোনো কথাই হয় না। কোনো অভিযোগও সাজিদকে কখনও করেন না।
আবেদিন আহমেদ আজকাল গ্রামের বাড়িতে খুব বেশি যাচ্ছেন। ওখানে গেলে নাকি আর ঢাকায় ফিরতে ইচ্ছা করে না, খুব শান্তি লাগে। ফল ফসলের যতœ করেন, গ্রামের লোকজনের সাথে গল্পগুজব করেন। গ্রামের কিছু লোক আবার উনাকে ইলেকশন করার জন্য ধরেছে। মানুষের এত দুঃখ দেখে মায়া লাগে। ওদের কথা বলার সঠিক মানুষ নাই। যারা পার্লামেন্টে যায় তারা চোর-বাটপার, নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। সত্যিকারের জনসেবার জন্য ক’জন কাজ করে কিন্তু মানুষ চাইলেও উনি নিজেকে এ ব্যাপারে অযোগ্য ভাবেন। সে সব কথা বলে হাসেন। ঢাকায় এত ব্যস্ততার জীবন তাই আমি ওখানে নিঃশ্বাস নিতে যাই অথচ ওরা আমাকে আরো কাজ করার জন্য বলছে। আজকাল কেমন জীবনের প্রতি মায়া কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন। ঢাকায় বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্য, কে দেখবে এসব। সাজিদ তো গান-বাজনা নিয়েই পড়ে আছে। এইসব বৈষয়িক বিষয়-আসয়ে মন দিবে কখন ? লিমার ভাবসাব কিছুই বুঝতে পারেন না। অথচ মেয়েরা আজকাল কত কি করছে। বিয়ে দিলে সে ছেলেই সব বিষয় সম্পত্তির মালিক হবে কিন্তু ভালো একটা ছেলে পাবেন কোথায় ? আবার সাজিদ বিয়ে করে সংসারি হওয়ার কথা ভাবছে কিনা তাও জানতে চাইলেন।
আবেদিন আহমেদ কি তবে সূ একটা ইচ্ছা পোষণ করছেন ভিতরে ভিতরে ? বোঝার চেষ্টা করে সাজিদ কিন্তু ও তো লিমাকে বোন ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না। পাঁচ ছয় বছর বয়সের এতটুকু একটা ছোট পুতুলের মতন মেয়ে ছিল লিমা, যখন সাজিদ ওদের বাসায় এলো। সাজিদের পিছে পিছে ঘুরত, সাজিদ ভাই, সাজিদ ভাই করে, গল্প শুনতে চাইত সারাক্ষণ। সেই মেয়েকে বিয়ে! ভাবতে পারে না সাজিদ। সংসারের ব্যাপারেও ওর কোনো আগ্রহ নাই। বেশ তো জীবন এখান থেকে ওখানে ঘুরে কেটে যাচ্ছে। ওর জীবন কি আর দশটা মানুষের মতন স্বাভাবিক ? হুট করে একটা মোচড় দিয়ে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থানে চলে যায়। এভাবেই চলুক, বেশ তো আছি।
মেয়ে ফ্যানরা বহুত স্মার্ট। ওরা মনে হয় কিছু কেয়ার করে না আজকাল। হুটহাট সব প্রেমে পড়ছে। সাজিদ হাসে মনে মনে, একা ও কয়জনকে সামলাবে? তার চেয়ে কারো পাল্লায় না পড়াই ভালো।
লিমার গানের গলাটা মিষ্টি ছিল, রেডিও টিভিতে প্রোগ্রাম করছিল, অথচ গানও এখন করে না মাকে দেখতে যাবো লিমার সাথেও কথা বলব, অনেকদিন হয়ে গেল দেখা হয় না। ও নিশ্চয়ই বদলেছে। নিজের মনে প্রতিজ্ঞা করে সাজিদ। অবকাশ পেলেই এমন অনেক ভাবনা-চিন্তা, পরিকল্পনা করে আবার ব্যস্ততায় সব ভুলে যায়।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent