বুধবার - এপ্রিল ২৪ - ২০২৪

ব্রাজিলের ইয়াটহাউজ

সরল স্ট্রাকচারাল কিউবে কম্পোজিট রিইনফোর্সড কংক্রিটে ডিজাইন করা হয়েছে এ ভবন

ব্রাজিল নিয়ে আমাদের আগ্রহ একটু বেশিই। ফুটবলে ব্রাজিল ভক্তদের আগ্রহের কারণ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। যাঁরা ব্রাজিল না জিতলে উল্লসিত হন, তাঁরাও ব্রাজিলকে শ্রদ্ধাসনে বসিয়েই এর বিরোধিতা করেন। আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ইতালি কিংবা ফ্রান্সের ক্ষেত্রেও তাই। ফুটবলে বিশ্ব কাঁপানো দেশটি কেবল পেলে, জিকো, সক্রেটিসের কারণে বিখ্যাত নয়। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও রেকর্ড গড়ছে প্রতিবছর। অর্থনৈতিক উন্নতির দৃশ্যমান সূচক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট। ব্রাজিলের রাস্তাঘাট আর সুউচ্চ ভবন নির্মাণ চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে বিশ্বকে।
ইয়াটহাউজ (Yachthouse) নামে নির্মীয়মান ভবনটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এটি আবাসিক এপার্টমেন্ট ভবন। উচ্চতায় সুপার টলেস্ট বিল্ডিং খেতাব পায়নি। তবে কাছাকাছি। স্থপতি সাহেব আর ২০ মিটার উচ্চতা বাড়ালেই এটি সুপার টল বিল্ডিং হতে পারতো। ২৮০.২৫ মিটারে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। ফ্লোরের সংখ্যা ৮১। তবে এর অবস্থান প্রকৃতির সুন্দরতম স্থানে। আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। দুই বৃহৎ নগরী রিও ডি জেনেরিও এবং সাওপাওলো থেকে দক্ষিণে ব্যালনিয়ারিও ক্যাম্বোরিউ শহরে।
ব্যালনিয়ারিও ক্যাম্বোরিউ শহরটি আন্তর্জাতিকভাবে তেমন কোনো বিখ্যাত কোনো শহর নয়। কিন্তু হাইরাইজ ভবনের সংখ্যা দেখলে অবাক হতে হয়। এতোসব হাইরাইজের মাঝে যুগল ভবনটি (টুইন টাওয়ার) নির্মিত হলে এটিই হবে ব্রাজিলের উচ্চতম ভবন। পুরো দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভবন। চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোতে রয়েছে সুপার টল ৩০০ মিটার উচ্চতার ‘গ্রান টোর’ ভবন।
ইয়াট হলো একরকমের নৌকা। পুরো ভবন একত্রে দেখলে মনে হবে ক্যাম্বোরিউ নদীতে একটি বড় ইয়টের উপর ভবনটি দাঁড়িয়ে। ভবনের প্রত্যেকটি এপার্টমেন্ট থেকে আটলান্টিকের ঢেউ দেখার সুযোগ রাখা হয়েছে। একদিকে নদী অন্যদিকে সমুদ্র, মোহনায় দাড়িঁয়ে ইয়াটহাউজ। এমন নৈসর্গিক পরিবেশে কার না থাকতে ইচ্ছে করে!
সরল স্ট্রাকচারাল কিউবে কম্পোজিট রিইনফোর্সড কংক্রিটে ডিজাইন করা হয়েছে এ ভবন। একজন টিমলিড আর্কিটেক্টের তত্ত্বাবধানে হলেও ভবনটির কোনো একক কৃতিত্বের দাবীদার স্থপতি নেই। ব্রাজিলের টপ আর্কিটেকচারাল ফার্ম পিনিনফারিনা এর স্থাপত্য পরিকল্পনা করে। পিনিনফারিনার স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার এবং জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা এর প্রকৌশলগত অবকাঠামো এবং মাটির নীচে ভিত্তি ডিজাইন করে।
স্থাপত্য পরিকল্পনা, অবকাঠামো, ভিত্তি এসবের পরেও প্রচুর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিটেইলিং থাকে। এর জন্য বিভিন্নরকম প্রকৌশলী প্রয়োজন হয়। যন্ত্রকৌশলী বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা ভবনের সমস্ত পাইপিং, শীতাতপ ডাক্ট ডিজাইন করেন। তড়িৎকৌশলী বা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা ভবনের প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক লোড ক্যালকুলেশন করে। প্রতিটি ইউনিটে নির্দিষ্ট মাপের তার ডিজাইন করে। এরপর নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান প্রকৌশলীদের ডিজাইন অনুসরন করে ধাপে ধাপে ভবনটিকে স্থায়ীভাবে মাটির উপর প্রতিষ্ঠিত করে। একারণে স্কাইস্ক্রাপার ভবনকে বলা হয় সকল প্রকৌশল বিদ্যার সমন্বিত প্রয়োগ। অর্থাৎ একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যা কিছু পড়ানো হয়, বড় ভবন নির্মানে প্রায় সবগুলো বিদ্যাই প্রয়োগ করা হয়। অথচ রাস্তা নির্মান, বিদ্যুতকেন্দ্র, বাঁধ, গাড়ি, উড়োজাহাজ ইত্যাদি নির্মানে তা লাগেনা।
এসবকারণে আর্কিটেকচারাল ফার্মকে প্রকৌশল ফার্মের শরণাপন্ন হতে হয়। প্রকৌশল সেবার জন্য পিনিনফারিনা ব্রাজিলের বিখ্যাত প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান ‘কন্সত্রুতরা পাসকোয়ালতো’ এবং জিটি’র সাথে কনসোর্টিয়াম করে।


ভবনদুটিতে ১৭টি এলিভেটর রয়েছে। ভবন ঘিরে যে কাঁচের আয়তাকার দেয়াল রয়েছে তার সারফেস আয়তন ৩০০০০ বর্গমিটারের উপরে। অর্থাৎ সোয়া তিন লাখ বর্গফুট।
এবছরেই এর ক্রেতারা ভবনের বাসিন্দা হয়ে যাবেন। কারণ নির্মান সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাবে। কানাডা থেকে বেড়াতে যেতে চাইলে সাওপাওলো বিমান বন্দরে নেমে মাত্র ৭৬০ কিলো দক্ষিণে গেলোই চলবে।

- Advertisement -

ব্রামটন, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent