শুক্রবার - এপ্রিল ২৬ - ২০২৪

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ছোট্ট মনোরম শহর

ছবি বিসি গভ

বয়স ৫০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার সকল লক্ষণ ফুটে ওঠে চোখের পাশের বলিরেখায়, পেট বড় হতে হতে শরীরের আগে ছোটে, বেল্ট দিয়ে কোনো রকমে টেনেটুনে তাকে গতরের মধ্যে যদিওবা আটকে রাখি তো মাথার চুলের ধূসরতা ঠেকানো যায় না, মস্তকের উপরের মাঝখানের বড় অংশ থেকে শরতের পাতার মতো সেগুলো ঝরে পড়ে আমার বয়সকে স্পষ্ট করে তোলে। মনে মনে ভাবি― টাকলা হতে আর কত দেরি!
আগস্ট মাসে তুলির ছেলের বিয়েতে যোগদিতে যখন ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ছোট্ট মনোরম শহর কেলোনা যাই, তখন ওর মুটিয়ে যাওয়া শরীর দেখে “এত মোটা হয়ে গেছ” জাতীয় মন্তব্য করলে পাল্টা মন্তব্য করে সে বলেছিল ওই কথাটি― “টাকলা হতে কত দেরি?”
আসলেই তাই। তুলি আমাদের বাল্যবন্ধু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো। এখন ঢাকায় থাকে, নিজের ব্যবসা চালায়। পুতুলের মতো দেখতে মেয়েটার ওপর বয়স এভাবে খরগহস্ত হবে, কে জানতো। অথচ তার স্বামীকে দেখুন, যৌবন যেন ভুল করে আটকে গেছে, অথবা শরৎ ঋতু হয়তো ভুলে গেছে এই মানুষটার কথা। বাপ্পি দা’র মাথা ভর্তি চুল, দেখে হিংসে হয়। আর শরীরটাকেও কীভাবে খেলোয়াড়দের মতো আঁটসাঁট করে রেখেছে। রহস্যের কথা আর জানা হয় না। আমরা বরং বিয়ের আগের হলুদ থেকে বিয়ের দিনের নানা আয়োজনে ব্যস্ত থাকি, নতুন নতুন মানুষদের সাথে পরিচয় হয়, তাদের বেশির ভাগ বাংলাদেশ থেকে উড়ে এসেছে, এমনকি তুলির যে নতুন বেয়াইন― তিনিও।
সেই তুলি তার ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করে ডিসেম্বরের শেষে। ¯িøম, স্মার্ট আর ফিটফাট। দেখে মনে হবে, অন্য কেউ ভুল করে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে পোজ দিয়েছে। সাথে সাথেই আমার বউয়ের ফোন।
: তুলি! এটা কার ছবি?
ওপাশে হা হা হা হা হাসির শব্দ শোনা যায়।
: থাপ্পড় মারব! তুই এত শুকালি কীভাবে?
: ডা. জাহঙ্গির কবির!
: মানে? তুই কি বাপ্পি দা’কে ছেড়ে কোনো ডাক্তারের প্রেমে পড়েছিস?
: মুখে যা আসে তাই বলিস। ইউটিউবে যা, ডা. জাহাঙ্গির কবির লিখে সার্চ দে। তারপর ভিডিওগুলো দেখতে থাক। কোনটা দিয়ে শুরু করবি, দাঁড়া বলছি― ওজন কমানো, এত এত ভিডিও কীভাবে শুরু করবো, ওটা দেখ।
ঠাস করে তুলি ফোন রেখে দেয়, বা দেয় না; অথবা সেই গল্প অনেক দীর্ঘ হয়। অনেক পুরোনো সুন্দরী অনেক দিন পরে যদি তার সৌন্দর্য ফিরে পায়, রূপকথার মতো লাগে বৈকি। তুলির মেয়ের নামও যে রূপকথা। তো আমরা সিন্ধুর ওপারের সেই রূপকথার মায়ের কথা তন্ময় হয়ে শুনি, শুনতেই থাকি।
আমি অবশ্য বেশিক্ষণ আগ্রহ ধরে রাখতে পারি না। কোথাকার এক ডাক্তার জাহাঙ্গীর, সে কি না জাদুর বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্ত করছে, তার কথা শুনে কারো কারো ওজন নাকি কমে যাচ্ছে ২০ কি ৩০ কেজি। যত্তসব গুলবাজ! বাংলাদেশ বলেই সম্ভব। ওখানে সবাই ডাক্তার। মায়ের পেট থেকে যে বাচ্চা জন্ম নিল আজ সকালে, তাকে যদি বিকালবেলা বলা হয় যে তোমার মায়ের সর্দি, তো সে তার কচি আঙুল উঁচু করে বেনাড্রিল (ডাইফেনহাইড্রামাইন হাইড্রক্লোরাইড, এলার্জিজনিত সর্দির জন্য বহুলভাবে ব্যবহৃত একটা ড্রাগ) এর বোতল দেখিয়ে দেবে।
আমার বউ ইউটিউব ছেড়ে দেয়। আমি চলে আসি।
পরদিন শনিবার। অনেক দিন পরে গুনে গুনে ৪টা বহুস্তরবিশিষ্ট লেয়ার পরাটা বানালাম। মচমচ করে ভেজে সাথে আলুভাজি, মিষ্টি আর ৩টা আস্ত ডিম দিয়ে বানানো ওমলেট, আর খেজুর গুড় দিয়ে বানানো ঘনলিকারের চা সাজিয়ে বউকে ডেকে বললাম, “খেতে আসো। সুপার-ডুপার নাস্তা। বহুদিন পরে!”
সে আসে না।
আমি জানতে চাইলাম, “কী ব্যাপার! নাস্তা খাবে না?”
: আমি বুলেট কফি খেয়েছি।
“বুলটে কফ!ি” আমার বস্মিয় যনে শষে হয় না। “সটো আবার কী?”
: আমার ক্ষুধা নাই। তুমি খাও।
বলে সে তার দপ্তরের কাজে মন দেয়। দুই বছর ধরে সে হোমবেইজড বিজনেস করছে― ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য অ্যাকাউণ্টিং আর ওয়েব ডিজাইনের কাজ। আমি যে নাস্তা খেতে ডাকছি সেদিকে তার ভ্রæক্ষেপ নাই। অথচ, এই মচমচে পরাটা, সাথে ডিমের ওমলেট বা ভুনা করে রান্না করা মাংস, এসব তার কতই না পছন্দের। ছুটির দিনে, বিশেষ করে আমাদের দুই মেয়ে যখন বাসায় ছিল, তখন এই খাবারের জন্য তারা সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করে থাকতো।
: ৪টা পরাটা আমি একা খাবো? আর ৩টা ডিম?
: না পারলে রেখে দাও। কালকে খাবে।
২টা পরাটা আর ওমলেটের অর্ধেক ফ্রিজে রেখে দিলাম। মিষ্টিগুলোকে ফ্রিজে সাজিয়ে রাখতে ইচ্ছে করলো না। খেয়ে ফেললাম। সকালে ম্যাটমরফিন খেয়েছি। রক্তের কার্ব ঠিক রাখার দায়টা তার। আর যদি বাড়ে তো দৌড়ানো যাবে। তাই বলে সামনে চকচকে রূপালী রসগোল্লা পরিত্যক্ত হবে, সেটা কি মানা যায়!
দুপুরে তাকে দেখলাম বাটার দিয়ে ডিম ভাজছে, একটা দুইটা না, একসাথে তিনটা। পাগল নাকি? বললাম, “ফ্রিজে ডিমের ওমলেট তো আছেই। আর একসাথে এতগুলো ডিম কোন ডাক্তারে খাইতে বলছে?”
বলল, “কেনোলা তেল খাওয়া যাবে না। আর তিনটা বেশি মনে হলো? ডাক্তার জাহাঙ্গীর বলেছে ৫টাও খাওয়া যায়। এসব বুঝবা না।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “মানে? কেনোলা তেলে স্যাচুরেডেট ফ্যাট কম। বাটার তো ফ্যাটে ভরা।” খানিকটা দম নিয়ে পানির গøাস হাতে সোফায় গিয়ে বসলাম, তারপর গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে আমার মতামত দিলাম, “শোনো, তোমার ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানের সাথে কথা না বলে এসব করা ঠিক না। কোলেস্টরেল সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে? রক্তনালিতে সব তেল জমে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে তখন বুঝবা। এগুলো বাদ দাও। ওজন কমাতে চাও, ভালো কথা, ট্রেডমিল আছে, সেখানে ঘণ্টাখানেক দৌড়াও। আর খেলায় যোগ দাও।”
সন্ধ্যায় ডিনারে দেখি আজব সব কারবার। শাক-সবজি সবই আছে, তবে নতুনরূপে। জিজ্ঞেস করে জানলাম সবই এক্সট্রা-ভার্জিন অলিভ অয়েলে রান্না, সাথে বেক করা রূপচাঁদা মাছ। মাছের গা বেয়ে তেল যেন উপছে পড়ছে। কোনো বাড়তি তেল না, এগুলো সবই মাছের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা। ভাত ছিল আমার জন্য। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে তার কারবার দেখতে লাগলাম। ভুলেও ভাতের দানা পাতে নিল না।
পরদিন একইভাবে সকালের নাস্তা, দুপুরে সেই ৪টা ডিম এবং সন্ধ্যায় শাক-সবজির সাথে মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি স্যুপ। ভাত আজও আছে, কারণ আমি তো আর ডাক্তার জাহাঙ্গীরের মুরিদ হইনি যে ভাত না খেয়ে থাকতে হবে। কাজেই খেলাম। কিন্তু মনে মনে অবাক হতে শুরু করলাম।
ভাত ছাড়া মানুষ হয়তো বাঁচে, কিন্তু বাঙালি? জল ছাড়া মাছ আর ভাত ছাড়া বাঙালি― ভাবা যায়? আমি বললাম, ঠিক আছে তোমার ডাক্তার জাহাঙ্গীরের ভিডিওগুলো দেখাও। দেখি ভদ্রলোক কী বলতে চায়।
আমার রক্তে যেহেতু চিনির আধিক্য, তাই সে বেছে বেছে ডায়াবেটিসের ওপরে করা একটা ভিডিও চালু করল। এক রোগী তার ডায়াবেটিস মুক্তির পরে মনের আনন্দ প্রকাশ করতে হাজির হয়েছে ডাক্তারের কাছে, চোখমুখে কথা ফুটছে― স্যার, আপনার পরামর্শ শুনে আমি ২০ কেজি ওজন কমিয়েছি, আর ৩ দিনের মাথায় ডায়াবেটিসের ওসুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। এখন সুগার ৫-এর নিচে।
বলে কী?
আমি ঘুরে ফিরে কয়েকবার দেখলাম। ডা. জাহাঙ্গীরের কথা বেশ সহজ, বুঝতে অসুবিধা হয় না। বিশেষ করে, তার পরামর্শ মেনে উপকৃত হওয়া মানুষরা যখন তাদের আবেগকে থামাতে না পেরে কান্না জড়ানো গলায় তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলে যায়, তখন অবিভর্‚ত না হয়ে পারা যায় না। মানুষগুলো কাঁদবে না-ই বা কেন? এদের কারো কারো শরীরে ১০ কি ১৫ বছর ধরে ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ কিংবা উভয়ে বাসা বেঁধেছে এবং আর সকলের মতো এই রোগগুলো সম্পর্কে এরা তো এটাই শুনে এসেছে যে এই রোগ কবর পর্যন্ত সাথে থাকে; সেখানে মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ওসব রোগ-বালাই যখন শরীর থেকে পালিয়ে যায়, তখন কোনো মানুষ স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে! যাহোক, ওসব দেখে দেখে যা বুঝলাম, তাকে নিজের মতো করে সাজালাম এভাবে:
কার্ব খেলে ইনসুলিন ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে বহন করে শরীরের কোষে নিতে। তারপর আমাদের কোষের মাইট্রকন্ড্রিয়া নামক চুলা সেই কার্ব পুড়িয়ে জালানি উৎপাদন করে। জ¦ালানি মানে শক্তি। তার মানে কার্ব হচ্ছে কাঠ বা শুকনো পাতা। যতক্ষণ চুলোয় জায়গা আছে, কাঠ বা শুকনো পাতা জ¦ালাতে অসুবিধা হয় না। সমস্যা দেখা দেয় বাড়তি কাঠে বা শুকনো পাতায়। তখন বাড়তি চাপ নিতে আমাদের কলিজা ঠান্ডা হয়ে আসে এবং কয়েক হাজার বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সে ওই কাঠ বা কয়লাকে চর্বিতে রূপান্তরিত করে। এভাবে আমাদের শরীরে চর্বি জমা হয়, জমতেই থাকে। শরীর তার নিজের স্বার্থে চর্বি জমায়, কারণ বহু বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষ যখন শিকার খেয়ে বা গাছের ফল খেয়ে বাঁচত, সেই সময় খাবারের সাপ্লাইচেইন বলে কোনো জিনিস ছিল না, ফলে দুই খাবারের মাঝের সময়টা অনির্দিষ্টকালের জন্য লম্বা হয়ে যেতো। তো জমানো সেই চর্বিই ছিল ভরসা। আর এখন খাবারের সাপ্লাই চেইন এতটাই শক্তিশালী আর নির্ভরযোগ্য যে, সেই জমানো চর্বি খরচ করে বাঁচার কথা ভাবতেই হচ্ছে না। ফলে, বছরের পর বছর ধরে আমাদের শরীরে এই জমানো জ¦ালানি অব্যবহৃতই থাকছে। শুধু থাকছেই না, তা তলপেটে জমতে জমতে পেটকে উঁচু করে দিচ্ছে, কলিজার আশেপাশের জায়গা দখল করে তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে, আর দুর্বল কলিজা মুখ, পাকস্থলি কিংবা ক্ষুদ্রান্ত থেকে বিরতিহীনভাবে ধেয়ে আসা খাবার নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। কলিজার তখন দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা! কিন্তু কে শোনে কার কথা? মাথার খুলিতে বসে থাকা মগজ কলিজার এই দুঃখ এই বেদনার কথা হয়তো শুনতেই পায় না, অথবা বার্তাহাতে বসে থাকা কলিজার কথাগুলোকে মগজের কাছে পৌঁছতে বাধা দেয় কেউ। ফলে, মগজ শুধু কোষের কথা শোনে, তার যে খাবার চাই, তাজা কার্ব, তাজা প্রোটিন। অথবা মগজ হয়তো শোনে প্যানক্রিয়াসের কথা, কারণ ততক্ষণে ইনসুলিন সাহেব হয়তো রক্তে বাড়তি চিনির খবর নিয়ে হাজির হয়েছে তার কাছে, ফলে মগজ হয়তো প্যানক্রিয়াসকে আরও ইনসুলিন সাপ্লাই দিতে বলে। অথচ শরীর ভর্তি চর্বি বা তেল। এ কেমন মগজ? এই মগজ কীভাবে তার জ¦ালানির এমন নির্ভরতার কথা ভুলে গেল? জমানো চর্বি কাজে লাগানোর প্রশ্নটা তার মাথায় জাগে না কেন?
জাগাতে হয়, জাগিয়ে দিতে হয়। ঘুমন্ত জাতিকে মুক্তির জন্য যেমন জাগাতে হয়, কোনো ত্রাতা এসে হয়তো “জাগো বাহে, কোনঠে সবাই” বলে, অথবা “আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না” বলে, তখন যেভাবে জাতি জেগে ওঠে, নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অপার শক্তির খোঁজ পেয়ে যায় এবং মুক্তির নেশায় মাতোয়ারা হয়ে যায়, সেভাবে আমাদের শরীরকেও জাগাতে হয়। আর সেই কাজটি করে বুলেট প্রæফ কফি।
বুলেট প্রæফ কফি!
হ্যাঁ, নামটা বুলেট প্রæফ কফি। শুনতে ভুল করিনি। নির্ভেজাল বাটার, নির্ভেজাল এক্সট্রাভার্জিন নারিকেল তেল এবং সাধু কফি― এই তিনের মিশ্রণে তৈরি কফি। আর যাদের কফিতে সমস্যা তাদের জন্য চা। কোনো চিনি না, কোনো গুড় না, কোনো দুধ বা ক্রিম না। সকালে এক কাপ খেয়ে নিশ্চিত মনে কাজ করতে করতে দুপুর হয়ে গেলে ঘি বা বাটারে ভাজা ৩-৪টা ডিমের ওমলেট, ঘি বা বাটারে ভাজা কয়েকটা কাজু-কাঠ-চিনা বাদাম― এই হচ্ছে লাঞ্চ, মানে দুপুরের খাবার। তা সত্তে¡ও, বিকালে যদি পেট খাই খাই করে, তবে ওইবাদাম কয়েকটা। এরপর সন্ধ্যায় পেট ভরে সবজি, মাছ বা মুরগি। সবজিগুলো নির্ভেজাল এক্সট্রাভার্জিন অলিভ অয়েলে রান্না, মাছও তাই, মুরগিও তাই। তবে মাছ বা মুরগির পরিমাণ কোনোভাবেই ৫ ভাগের ১ ভাগের বেশি হতে পারবে না, কারণ বেশি প্রোটিন আসলে খরচ না হয়ে ওই চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে শরীরে জমে যায়। তার মানে, যা খাবো, তার ৪ ভাগ সবজি, আর ১ ভাগ প্রোটিন। সহজ প্রোটিন। সালাদের সাথে অর্গানিক অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মেশাতে হবে। এর অনেক গুণ। রক্তে চিনি কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং বহুধরনের ভালো ব্যাকটেরিয়ার জোগান দিয়ে পরিপাকতন্ত্রকে সবল রাখে। ভাত, রুটি, পরাটা, কলা থেকে শুরু করে নানাজাতের মিষ্টি ফল―আপাততসব বাদ। দুধ, দই, মিষ্টি, বিস্কিট, চানাচুর― সেগুলোও বাদ। শাকসবজিতে লুকিয়ে থাকা কার্বের পরিমাণ কিন্তু কম না, কাজেই শরীরে যে গøুকোজ লাগে আপাতত তা শাক-সবজি থেকেই আসতে থাকুক।
কেবল খাওয়া দাওয়া না, প্রতিদিন সময়করে ২০ মিনিট হাঁটা, রাতে ১০টার মধ্যেই ঘুমাতে যাওয়া, খুব ভোরে ওঠা― আর এসব জানতে গিয়ে শরীরের হরমোন কখন কে কীভাবে নিঃসৃত হয়, সেটা জেনে গেলাম। আর হাঁটতে গিয়ে সকালের সূর্যের আলো যদি চামড়া ভেদ করে, তবে সেই সোনালি রোদ যে ভিটামিন ডি’র জোগান দেয়, সেই জানাগুলোকে নতুন করে জানলাম। তারপর সব জানাগুলোকে একত্রিত করে প্রথম সপ্তাহের জন্য একটা তালিকা দাঁড় করালাম।
সকালে বুলেটপ্রæফ কফি, তা না হলে চা, দুপুরে বাটারে-ভাজা ডিম ও বাদাম, সন্ধ্যায় এক্সট্রাভার্জিন অলিভ অয়েলে রান্না করা শাক-সবজি, মাছ বা মুরগির মাংস। অফিসের দিনে যেহেতু সকালে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা সম্ভব না, তাই সন্ধ্যায় ডিনারের আগে আধাঘণ্টা ওই কাজের জন্য বরাদ্দ করলাম। আর ঘুমানোর সময় ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা। এতে করে রাতজেগে নেটফ্লিক্স-এ মুভি দেখার বারোটা বাজলো। মুভি দেখার এগারোটা অবশ্য আগেই বেজেছিল, কারণ ইউটিউবে ডা. জাহাঙ্গীরের ভিডিও শেষ হতে না হতেই কানাডিয়ান ডাক্তার জ্যাসন ফাং-এর ভিডিও হাজির হতে থাকলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বদৌলতে। ডাক্তার ফাং-এর অডিয়েন্স যেহেতু পশ্চিমা বিশে^র ইংরেজি জানা মানুষ, সেজন্য তার উপস্থাপনায় নানা গ্রাফ আর তথ্যসূত্র দিয়ে ভরা। এরপর জ্যাসন ফাং শেষ না হতেই আরেক ডাক্তার, এভাবে একের পর এক ডাক্তারদের ভিডিওতে ইউটিউব ঠাসা। সকলের এক কথা― লাইফস্টাইল! লাইফস্টাইল চেঞ্চ করলেই মনজিলে মকসুদ, মানে সুস্থ শরীর। এই মানুষগুলো এতদিন কোথায় ছিল?

 

- Advertisement -

Read More

Recent