বৃহস্পতিবার - মার্চ ২৮ - ২০২৪

স্বাধীনতার ঘোষণাপাঠ দিবস স্মরণে

বাংলাদেশে আজ ২৭ মার্চ। জিয়াউর রহমান কর্তৃক অন বিহাফ অব শেখ মুজিবুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ দিবস।২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের একদিন পরের এই ঘোষণাপাঠ নিয়ে কতো কাহিনি ঘটে গেছে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র ও তাঁর স্থপতির ওপর দিয়ে!

- Advertisement -

ঊনিশ বছর আগে, ২০০৪ সালে রচিত আমার একটি ছড়ায় সেই অপকীর্তির যৎসামান্য বয়ান এখানে–

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে একাধিক ছড়া লিখেছি। লিখেছি মানে লিখতে বাধ্য হয়েছি। স্বাধীনতা দিবস এলেই শুরু হয়ে যেতো  ঘোষক প্রশ্নে অহেতুক তুমুল হট্টগোল। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের দীর্ঘ ধারাবাহিক ইতিহাসের কোণাকাঞ্চিতেও নেই এমন একজন মেজরকে (জিয়াউর রহমান) ঘোষক বানিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অশুভ সূচনা শুরু করেছিলো ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দল।(সেই সার্কাস আজো চলছে।) বিশেষ করে ২০০১ সালে জামাতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে চারদলীয় জোট সরকারের ব্যানারে ইতিহাস বিকৃতির ঘৃণ্য খেলায় মেতে ওঠে। জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম নিশানা মুছে ফেলে তাঁর জায়গায় জিয়াউর রহমানকে প্রতিস্থাপন করতে চায় ওরা। অনেক ছড়া লিখেছি তখন। বেশিরভাগই ছাপা হয়েছিলো দৈনিক জনকন্ঠে। স্বাধীনতার ঘোষক বিষয়ে এই ছড়াটি ঊনিশ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৪ সালে লেখা। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত জিয়াউর রহমানের লেখা ‘একটি জাতির জন্ম’ শিরোনামের রচনাটি পুনঃপাঠের সময় ছড়াটির আইডিয়া এবং ফরম্যাট মাথায় এসেছিলো। সেই হিশেবে এই ছড়াটির নেপথ্য প্রেরণা জিয়াউর রহমান স্বয়ং!

আজ স্বাধীনতা দিবসের তেপান্ন বছর উদযাপনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সকল বীর শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ফেসবুক বন্ধুদের উদ্দেশে নিবেদন করছি সেই ছড়াটি–

————-

অন বিহাফ অফ শেখ মুজিবুর আমি মেজর জিয়া
লুৎফর রহমান রিটন

ইন্টারেস্টিং বিষয় থাকে ছেলের হাতের মোয়াতে
ছেলের হাতের মোয়া খাওয়ার চাইনি সুযোগ খোয়াতে
অস্ত্র ছিলো বোঝাই, খালাস করতে গেলাম সোয়াত-এ
চেয়েছিলাম পাকিস্তানের পক্ষে মাথা নোয়াতে
মুক্তিপাগল মানুষগুলোর অন্যরকম ছোঁয়াতে
বদলে যেতে বাধ্য হলাম, বাবা মায়ের দোয়াতে—
অটোমেটিক ঠাঁই পেয়েছি ইতিহাসের ‘ধোঁয়া’তে!
যদিও জানি স্বাধীনতা ছেলের হাতের মোয়া না
স্বাধীনতা অস্পষ্ট আবছা এবং ধোঁয়া না ।
‘একটি জাতির জন্ম’ লিখে সেটাই বলতে চেয়েছি
আমার যেটুক প্রাপ্য আমি বেঁচে থাকতেই পেয়েছি।
এখন দেখছি মরার পরে ইতিহাসের বিকৃতি!
জবরদস্তি ইতিহাসে করছে আদায় স্বীকৃতি!
স্বাধীনতার দলিলপত্রে মিথ্যা তথ্য ছাপাচ্ছে!
মিথ্যাচারের সমস্ত দায় আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছে!
জীবদ্দশায় ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ নিজকে বলিনি
সুযোগ ছিলো জ্বলে ওঠার, মিথ্যে আলোয় জ্বলিনি।
গ্রেট ন্যাশনাল লিডার ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান
ছাব্বিশে মার্চ তাঁর ঘোষণা ইতিহাসেই বহমান।
উর্দি পরা মেজর ছিলাম, তাঁর তুলনায় নগণ্য
সমকক্ষ নই আমি তাঁর, এইটা ভাবাও জঘন্য!
গ্রিন সিগনাল পেয়েছি তাঁর সাতই মার্চের ভাষণে
আমি থাকবো আমার স্থানে আর তিনি তাঁর আসনে।
ঘোষক এবং পাঠক দুটির অর্থ কিন্তু আলেদা
আমি বুঝলেও বুঝতে চায় না তারেক কিংবা খালেদা।
অন বিহাফ অব শেখ মুজিবুর পাঠ করেছি ঘোষণা
ঐতিহাসিক সত্য এটাই, ওরে মানিক ও সোনা…!
স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছি মার্চ সাতাশে
কী আলোড়ন বাংলাদেশের আকাশে ও বাতাসে!
সাতাশে মার্চ সন্ধ্যা বেলায় পাঠ করেছি বেতারে
ইতিহাসের শক্তি অমোঘ, মুছতে পারে কে তারে?
আমার আগে হান্নানেরা পাঠ করেছে বারংবার
তাঁদের পরে পাঠ করাটাও ঐতিহাসিক অহংকার।
ওঁরা ছিলেন সিভিলিয়ান, নয়কো সেনাবাহিনী
তাই তো আমার ‘ঘোষণা পাঠ’ উদ্দীপনার কাহিনী!
মূল ইতিহাস এই,
এই ইতিহাস মুছে ফেলার কোনোই উপায় নেই!
অন বিহাফ অফ শেখ মুজিবুর আমি মেজর জিয়া—
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ‘ঘোষণা পাঠ’ কিয়া…..।

 অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent