শুক্রবার - এপ্রিল ১৯ - ২০২৪

প্রিয় মানুষ

আপনাকে কালো রঙের পাঞ্জাবীতে এত সুন্দর লাগে আগে জানতাম না তো!

- Advertisement -

সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে উক্ত কথাটি কর্ণগোচর হতেই দোতলার বামপাশের ফ্ল্যাটটার দিকে তাকায়েই থমকে যায় শিখন। প্রতিদিনের ন্যায় আজও ফ্ল্যাটের দরজার সামনে পেছনে হাত বেধে দাঁড়িয়ে আছে অসিফা। এটা যেন মেয়েটার রোজকার রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে। মাঝে মাঝে বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুচকে যায় শিখনের। বিরক্তিটা আসে সে রোজ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে তার জন্য নয়। দাঁড়িয়ে থাকার উদ্দেশ্যটাকে সে ঠিক পছন্দ করেনা।

তটুকু মেয়ের মাথায় ভালোবাসা বিষয়টা ঘুরপাক খাবে কেন? এটাই এক মস্ত বড় বিরক্তির কারণ শিখনের কাছে। কতবার ধ’ম’কে’ছে সে এই মেয়েটাকে! তবুও লজ্জা কিংবা ভয় দুটোর একটাও যেন তাকে স্পর্শ করেনা। এই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠাটাই যেন মস্ত এক ভুল ছিল বলে তার মনে হয় এখন।

-শুনুন! দ্রুত বাসায় যান আর এই পাঞ্জাবী বদলে অন্য কিছু পরে আসুন। আমি চাইনা আমি ব্যতীত অন্য মেয়েরা আপনাকে দেখে পাগল হোক। (অসিফা)

বিরক্তিতে ছেয়ে যায় শিখনের মুখ। বাজখাঁই কন্ঠে বলে ওঠে,

-তোমার ইচ্ছা মতো চলতে হবে আমাকে? মনে কি লজ্জা বা ভয় বলতে কিছুই নেই তোমার? সামনে না তোমার পরীক্ষা? যাও পড়তে বসো গিয়ে।

ধপাধপ পা ফেলে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায় শিখন।

বাড়ি থেকে বের হয়ে তিন-চার কদম এগোতেই কোথা থেকে যেন ঝমঝম করে পানি এসে শিখনের ওপর পড়ল। ভিজে একাকার হয়ে যায় শিখন। পানি যে কোথা থেকে এসে পড়েছে তা বুঝতে এক মুহূর্তও সময় লাগল না তার। শিখন আগুন ঝরা চোখে দোতলার খোলা বারান্দার দিকে তাকাতেই বড় আকারের একটা খালি বালতি নিয়ে ছুটে রুমের ভেতরে চলে যায় অসিফা। রাগে সারা শরীর কাপতে শুরু করে শিখনের। এক প্রকার ছুটে আবার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সে। সিড়ি বেয়ে যেই দোতলায় পা রাখল শিখন ওমনি ফ্ল্যাটের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে অসিফা।

-ভালোয় ভালোয় বলেছিলাম পাঞ্জাবী বদলে যেতে। আমার কথা তো শুনলেন না। নিন এখন শা’স্তি ভোগ করুন। (অসিফা)

ঝড়ের গতিতে এসে অসিফার গালে ঠাটিয়ে একটা চ’ড় বসিয়ে দিয়ে শিখন বলে ওঠে,

-লজ্জা থাকলে আর কখনো আমার সামনে এসো না তুমি।

-এই চোখ দিয়ে আপনাকে অন্য কারো সাথে না দেখা পর্যন্ত আপনার এই ধ’ম’ক আমার ওপর কোনো প্রতিক্রিয়া ফেলবেনা। আর আপনার এই ধ’ম’ক আমার কাছে সবসময় মিছাই থেকে যাবে। কেননা আপনি একান্তই আমার। (অসিফা)

আর পেছরে ঘুরে তাকায়নি শিখন। রা’গে ফোসফোস করতে করতে সিড়ি বেয়ে চারতলায় চলে যায় চোখের পলকে।

বৃষ্টি ভেজা এক ভরদুপুরে কোচিং থেকে ফিরছিল অসিফা। এক মাস বাদেই তার মাধ্যমিক পরীক্ষা।
আচমকা চোখ আটকে যায় একই ছাতার নিচে হেটে আসা এক যুবক ও যুবতীর দিকে। যুবককে চিনতে একদম হেরফের করেনি অসিফা। শিখনের পাশে অন্য এক মেয়েকে দেখে শরীর জ্বলে ওঠে তার। পরক্ষণেই আবার নিজেকে শান্ত করে নেয় অসিফা। মেয়েটা তো তার ব্যাচমেট বান্ধবীও হতে পারে। একটা ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলের বান্ধবী থাকাটা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়! এই শান্ত ভাব আর দীর্ঘ সময় স্থায়ী হলো না অসিফার মনে। নিজ হতে যেচে মেয়েটার হাত শিখনকে ধরতে দেখে চোখ রসগোল্লার ন্যায় আকার ধারণ করে তার। ডান হাতের তালুতে ভেজা চোখ মুছে নিয়ে উলটো দিকে ঘুরে বিপরীত পথে ছুট লাগায় অসিফা। আর কখনো সে এই ছেলেটাকে দেখবে না। লুকিয়ে উকি-ঝুকি দিয়েও দেখবেনা। কখনো তার সামনেও যাবেনা। এক আকাশ সমান অভিমান বুকে পুষে নিয়ে ছুটতে থাকে অসিফা।

সেদিনের পর হতে আর কখনো অসিফা শিখনের সামনে আসেনি। কিছুদিন স্বাভাবিক কাটলেও এখন শিখনের কেমন খালি খালি অনুভূত হয়। প্রতিদিন দোতলার সিড়ি থেকে ওঠা-নামা করার সময় মিনিট দুয়েক ফ্ল্যাটের দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু না অসিফা আর দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকেনা। রোজ ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় এবং ফেরার সময় দোতলার বারান্দার দিকে তাকায় শিখন। কিন্তু সেখানেও আর মেয়েটা এসে তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেনা। মেয়েটার এই পাগলামিগুলো যে তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে তা আর বুঝতে বাকি নেই শিখনের।

দেখতে দেখতেই দেড় মাস পার হয়ে গেছে। দুদিনের ট্যুর শেষ করে মাত্র ফিরেছে শিখন। কাধে ভারী ব্যাগ নিয়ে ক্লান্ত শরীরে দোতলায় এসে দাড়াতেই চোখ আটকে যায় বাম পাশের সেই ফ্ল্যাটটার দিকে। দরজায় বড়সড় একটা তালা ঝুলছে। আ’তংকে ভরা দৃষ্টিতে পাশে তাকাতেই বুকের মাঝে চিনচিন ব্যথা আরম্ভ হয়ে যায়। দরজার একটু পাশেই দেয়ালে টু-লেট বোর্ড ঝোলানো।

মায়ের কাছে শুনে জানতে পারে অসিফার বাবার ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছিল মাস খানেক আগেই। কিন্তু অসিফার পরীক্ষার জন্য তখন তারা যেতে পারেনি। শিখনের আর বুঝতে বাকি নেই ট্রান্সফার অফিসের আদেশে হয়েছে নাকি অসিফার বাবা তার মেয়ের জোরজবরদস্তিতে পড়ে অন্য শহরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

সেদিন মেয়েটাকে দূরে সরানোর জন্য অমন নাটক করলেও আজ শিখন বুঝেছে জীবনের বড়সড় একটা ভুলই ছিল সেটা। যেখানে এই সমাজে মানুষ একটু ভালোবাসা পাবার জন্য আহাজারি করে সেখানে সে পেয়েও অবহেলা করেছে। মেয়েটা তার কথা রেখেছে তবে। তার সেদিনের ধ’ম’ক তবে আসলেই মেয়েটার ওপর প্রতিক্রিয়া ফেলেছে। মেয়েটা কখনোই আর তার সামনে আসেনি। হয়তো আর কখনো আসবেওনা। সেদিন যদি সে জানতো ওই ধমকই তার রাতে নিশ্বাসের পাল্লাকে কঠিন থেকে কঠিনতর ভারী করে তুলবে তবে অমন ধমকও সে কখনো দিতোনা। মেয়েটা যে না পাওয়ার য’ন্ত্রণায় পু’ড়ে’ছে এবং এখনো পু’ড়’ছে তা যে সংক্রামিত হয়ে আজ তাকেও পু’ড়িয়ে ছাড়খার করে দিচ্ছে।

এই গল্পের কি আদৌ কোনো নাম আছে? না এই গল্পের কোনোই নাম নেই।

ইস্টইয়র্ক, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent