মঙ্গলবার - এপ্রিল ১৬ - ২০২৪

পার্পেল রেইনবো

“Purple Rainbow” প্রকাশিত হবার আগেই উপন্যাসটি পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। উপন্যাসটি পড়ার পর বেশ কয়েকদিন মনের মধ্যে এর রেষ ছিল। বেদনার একটা স্রোত মনের গভীরে প্রতিনিয়ত বয়ে চলেছিল। আমি লেখিকা সবিতা সোমানীকে বলেছিলাম, এমন একটি অসাধারণ উপন্যাস অবশ্যই প্রকাশ করবেন। এর মধ্যে যে বার্তা আছে, আবেদন আছে তা সমাজের উপকারে আসবে।

- Advertisement -

উপন্যাসটি পড়ার পর নিজের কাছেই প্রশ্ন জেগেছিল, আমি নিশার বাবা হলে কি করতাম? একজন লেখকের সার্থকতা হচ্ছে, পাঠকের মনকে নাড়া দেওয়া, পাঠকের মনে কিছু প্রশ্নের  উদ্রেক করা। পাঠক নিজেই যখন তার অশান্ত মনকে শান্ত করার  জন্য পথ খুজবেন, প্রশ্নগুলির উত্তর পাবার চেষ্টা করবেন সেখানেই লেখকের আসল সফলতা। সেদিক দিয়ে বিচার করলে Purple Rainbow -র লেখিকা সার্থক এবং সফল উভয়ই। তিনি পাঠকের মনকে ছুঁয়ে যেতে পেরেছেন,পাঠকের মনকে আলোড়িত করতে পেরেছেন।

এই ধরনের একটি বই প্রকাশে সাহস লাগে। লেখিকা সেই সাহসটি দেখিয়েছেন।  লেখিকার মনে পাঠকদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছু শংকা ছিল,আশংকা ছিল।উপন্যাসটিকে কে কিভাবে নিবেন?  একজন পাঠক হিসাবে আমি বলেছিলাম, আপনি লেখিকা হিসাবে একটি বাস্তব চিত্রকে  লেখার মাধ্যমে ফুঁটিয়ে তুলেছেন। আপনি তো কারো দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য নিজস্ব কোন মতামত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেননি। এই উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠকদের মনে কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি করার ক্ষেত্র তৈরি করেছেন মাত্র। একজন লেখক সেটি করতেই পারেন।

আমি যখন যুবক কিংবা কিশোর বয়সে শরৎ চন্দ্রের বিভিন্ন উপন্যাস পড়েছিলাম তখন পাঠক হিসাবে আমার মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছিল।শরৎ চন্দ্র কেন শুধু সমাজের অসংগতিগুলি তুলে ধরেন? কেন তিনি শুধু কুসংস্কারাচ্ছন সমাজের চিত্রগুলি ফুঁটিয়ে তুলেন?  কেন তিনি এর কোন সমাধান দেন না?  কেন পাঠককে বলে দেন না, এখান থেকে উত্তরণের পথ এটি?

পরে নিজেই এই সব প্রশ্নের উত্তর খোজার চেষ্টা করেছি। লেখকের কাজ কোন কিছুর সমাধান দেওয়া নয়। লেখক সমাজের অসংগতির চিত্র তুলে ধরেন,সমাজের অন্ধকারাচ্ছ দিকটি পাঠকের সামনে উন্মোচন করেন। তার থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দেওয়া লেখকের কাজ নয়। সেই কাজটি করবেন পাঠক,  সমাজ/ রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা।

Purple Rainbow-র লেখিকা সবিতা সোমানী তার লেখার মাধ্যমে সমাজের একটি বাস্তব চিত্রকে পাঠকের সামনে উন্মোচিত করার কাজটিই করেছেন,সেই মহৎ দায়িত্বটিই তিনি পালন করেছেন।

উপন্যাসটি ২২ বছর বয়সী কিশোরী নিশাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। পিতৃপ্রধান একটি রক্ষনশীল পরিবারে নিশার জন্ম। পরে সে বাবা-মার সংগে উন্নত দেশ কানাডায় এসে এখানেই বেড়ে উঠেছে,এখানকার মূল্যবোধকে সে ধারন করেছে, এখানকার সংস্কার, এখানকার মুক্ত পরিবেশ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র‍্যের চরম বিকাশ, আধুনিক সভ্যতার বিজ্ঞানমস্কতা, সেক্সচুয়াল ওরিয়েন্টেশনের ক্ষেত্রে  এখানকার দৃষ্টিভংগী ইত্যাদিকে ধারন করে নিশা বেড়ে উঠেছে।

ফলে একটা সময় জীবন সংগীনিকে বেঁছে নেওয়ার প্রয়োজনে নিশা তার বাবা-মার কাছে তার ভিন্ন ওরিয়েন্টেশনের কথা প্রকাশ করে দেয়। বাবা কবির তার কঠিন রক্ষণশীল মানসিকতার কারনে মেয়ের এই অবস্থানকে কখনই মেনে নিতে পারেননি।

মা রুম্পা নিজের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মেয়ের পক্ষে তার সর্ব শক্তি দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেন।স্বামী কবিরকে নানাভাবে বুঝানোর ক্ষেত্রে কোন কার্পণ্য বাকী রাখেননি।  একটি অভিবাসী সাউথ এশিয়ান মুসলিম পরিবার এবং কানাডার  সমাজে বেড়ে উঠা একটি মেয়ের নিজের জীবন পথ বেঁছে নেওয়ার মাঝে যে সংঘাত, যে দ্বন্দ্ব ; এই উপন্যাসটিতে তা অসাধারণ নৈপুণ্যতায় প্রকাশ পেয়েছে।

উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্রগুলি লেখিকা মনের  মাধুর্য এবং মায়াবী  ছোঁয়ায় ফুঁটিয়ে তুলেছেন। আদি,অনিকা, সিমা,নিশার দাদা ; চরত্রিগুলি অসাধারণ  মানবিকতার পরশ দিয়ে  লেখিকা ফুটিয়ে তুলে পাঠকের মনে এক গভীর আবেদন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

বাকীটুকু পাঠকবৃন্দ Purple Rainbow উপন্যাসটি  পড়লেই বুঝতে পারবেন।

Amazon-এ উপন্যাসটির ক্রয়মূল্য ৪.৯৯ ডলার। উপন্যাসটি পড়ার পর পাঠকদের মনে যে আবেগ,অনুভূতি,আবেদন সৃষ্টি হবে তা নি:সন্দেহে বইয়ের মূল্যের চেয়ে হাজার গুন বেশি হবে।

বইটি কিনুন, সংগ্রহে রাখুন।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent