বৃহস্পতিবার - এপ্রিল ২৫ - ২০২৪

মানুষ ও কুকুরের মধ্য গভীর ভালোবাসা

ছবি ট্যাইলর কোপেল

মানুষ ও কুকুরের মধ্য গভীর এক ভালবাসার সম্পর্ক আছে । কুকুর সেটা জানলেও বাংলাদেশের মানুষ সেটা জানেন না। আপনি নিজের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা ভালবাসার অনুভবটি জাগ্রত করতে যদি আপনার সঙ্গতি থাকে তবে একটি কুকুর পুষে দেখতে পারেন। দেখবেন একটি কুকুর আপনাকে কিভাবে ভালবাসা শেখায়। অত্যন্ত দুঃখজনক যে ষাটের দশকে ছোটবেলায় আমরা অনেকের বাড়িতে কুকুর দেখেছিলাম। গৃহকর্তারা চোর ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে তখন কুকুর পুষতেন তার নিজের স্বার্থে , সেটা কুকুরের প্রতি ভালবাসা থেকে নয়। কিন্তু কুকুর তার গৃহকর্তাকে অত্যন্ত গভীর ভালবেসে  তাদের খাবারের উচ্ছিষ্ট খেয়েই বাড়ির উঠোনে পরে থাকত, আর রাত জেগে পাহারা দিত।

শৈশবে কুকুরের প্রতি আমজনতার অনেক নিষ্ঠুরতা আমরা দেখেছি। লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে  ক্ষুধার্ত কুকুরগুলোকে  আমরা আহত রক্তাক্ত করেছি। কুকুরের বিরুদ্ধে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের একটা ধর্মীয় বদ্ধমূল বিশ্বাস ( Stigma) থেকে আমরা মনে করি যে তারা নাপাক ও নোংরা। কুকুর দেখলেই দুর দুর করে খেদিয়ে দেয়া একটি অতি সাধারণ চিত্র বাংলাদেশে। কারো প্রতি ঘৃণা বা ক্রোধ দেখাতে তাকে আমরা বলি ‘ কুত্তার বাচ্চা’। অথচ কুকুরের বাচ্চাদের মত নিরীহ সুন্দর প্রাণী খুব কম দেখা যায়। কুকুরের প্রতি ঘৃণার অন্যতম আরেক কারন হলো সবার একটা স্টেরিওটাইপিক ধারনা যে কুকুর কামড়ায়। আসলে বিষয়টি তা নয়। ভালবাসা দিয়ে বিনিময়ে মানুষের কাছে নির্মম আচরণ পেয়ে বাংলাদেশের ক্ষুধার্ত ও রুগ্ন পথ কুকুরগুলি সবসময়ই একটা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এজন্যই নিরাপত্তার সংকট  অনুভব করলেই তারা কামড়ে দিয়ে নিজেদের রক্ষা করে। দীর্ঘ বাইশ বছর প্রবাসে থেকে আমি খুব কম দেখেছি কুকুর কাউকে কামড় দিয়েছে। কুকুর দেখে দৌড় দিলে অথবা লাঠি হাতে নিলে কুকুর ধরে নেয় আপনি একজন চোর অথবা খারাপ মানুষ। তখন সে আপনাকে ধাওয়া দিয়ে আটকে দেবে অথবা কামড় দেবে। যে কোন মুল্যে প্রভুর জান মাল রক্ষার দায়িত্ব তার জেনেটিক বৈশিষ্ট্য। এটা আপনাকে জানতে হবে এবং কুকুর দেখলে তাদের হাত বাড়িয়ে নাক ছুঁয়ে  উইশ করলেই দেখবেন  কেবলমাত্র অসুস্থ পাগলা কুকুর ছাড়া অধিকাংশ কুকুর আপনাকে লেজ নেড়ে ভালবাসা জানাবে।

- Advertisement -

একসময়ে রাজধানী ও বড় শহরগুলোতে উচ্চ বৃত্তের স্ট্যাটাস সিম্বল ছিল বিদেশি কুকুর। এখন বাংলাদেশে অবস্থা পাল্টেছে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে কুকুর বিড়াল ও পোষা প্রানীদের উপর একটা মমত্ববোধ তৈরি হয়েছে। গত তিন বছর কোভিডকালীন সময়ে খাবার না পেয়ে হণ্যে হয়ে ঘোরা পথের কুকুরগুলিকে মানবিক নতুন প্রজন্মের মানুষেরা খাবার দিয়েছে।  বাড়িতে বাড়িতে কুকুর বিড়াল রেখে এখন তাদের প্রতি যত্ন আদর  ও চিকিৎসা সেবা যেমন বেড়েছে তেমনি এইসব প্রানীদের নিয়ে ভালবাসার এক পারিবারিক পরিবেশ তৈরিতে মানবিক মানুষেরা  এগিয়ে আসছে। ঢাকায় আমার বন্ধু ভেটেরেনারী ডাক্তার বায়েজিদ বাহালুল জানিয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় ভেটেরেনারী হাসপাতালে দুই দশক আগেও যেখানে শুধুমাত্র গরু বকরীর চিকিৎসা হতো সেখানে গত ২০২১-২২ সালে ৪০১৬ টি কুকুর ও ১৪৪৪১টি বিড়ালের চিকিৎসা হয়েছে। এই সংখ্যা গত বছরের দ্বিগুণ বলা চলে। কুকুর বিড়াল ছাড়াও নানা রকমের পশু পাখী ও প্রাণীদের গৃহে পালন করার ঘটনা এখন দিন দিন বেড়েই চলেছে। সরকারের প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের আবেদনে সম্প্রতি সংসদে প্রানী কল্যাণ আইন পাশ করা হয়েছে। প্রানীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করলে আপনাকে  এখন থেকে জেল জড়িমানা খেতে হবে।

কানাডা আমেরিকাতে চিকিৎসকগন মানুষের মধ্যে একাকীত্বের অবসাদ, বিষন্নতা দুর করতে বাসায় কুকুর পালতে ( therapy dog) পরামর্শ দেন। অন্ধ লোকজনের জন্য এখানে পথ প্রদর্শক গাইড ডগ আছে। উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার ও মানসিক রোগের উপশমে এসব দেশে মানুষ কুকুর বিড়াল পোষেন। আমি খুব আনন্দিত হয়েছি ঢাকা, বগুড়া, চট্টগ্রাম সহ অনেক শহরে এখন এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন গুলির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এনিমেল সেফ হাউস, বোর্ডিং হাউসের মতো সার্ভিস। পশুপাখীদের প্রতি জনগণের মায়া ভালবাসা এবং  দায়িত্ববোধ বাড়ছে। এর সবকিছুই খুব ভাল লক্ষণ। এক মনীষী বলেছেন ‘ একজন মানুষের হৃদয়ের কোমলতা কতটুকু  যদি আপনি সেটা দেখতে চান তবে দেখতে হবে ঐ লোকটি পশু পাখিদের উপর কেমন আচরণ করেন? ‘

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent