বৃহস্পতিবার - এপ্রিল ২৫ - ২০২৪

একটি হুমকির জবাবে আরো একটি ছড়ার জন্ম

ছবি রিসাব পানডোস

কাল রাতে ঢাকা থেকে ফোন করেছিলো রোমেন রায়হান। আমার খুবই প্রীতিভাজন। ওর কৈশোরোত্তীর্ণ কাল থেকেই সে আমার বিশেষ স্নেহভাজন ছিলো। কাল ফোনে সে আমাকে রীতিমতো থ্রেট করলো–রিটন ভাই আপনি একটা ভূতের ছড়ার সিরিজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ করেন নাই। আর কয়েকটা ভূতের ছড়া লিখলেই নতুন একটা বইয়ের পান্ডুলিপি তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু আপনি শেষ করছেন না।

সিনিয়র ছড়াকার হিশেবে আপনাকে ছাড় যেটুকু দেয়ার দিয়েছি। এখন আপনি যদি ভূত সিরিজটা শেষ না করেন তাইলে কিন্তু আমি একটা ‘ভূতের সিরিজ’ শুরু করুম রিটন ভাই…।

- Advertisement -

রোমেনের হুমকিটা হজম করলাম। বয়েস হয়েছে আমার। বয়েসের একটা সৌন্দর্য আছে। আগের মতো মুহূর্তেই রেগে যাই না এখন। হাসিমুখে ওর লেখালেখির খবর নিলাম। ওর কিছু পরিকল্পনার কথা সে হড়বড় করে বলে গেলো। ওর লেখা অনেকগুলো বাঘের ছড়া নিয়ে একটা পান্ডুলিপি প্রায় সাজিয়ে এনেছে। আর কয়েকটা বাঘের ছড়া লিখলেই বইটা দাঁড়িয়ে যাবে। প্রকাশিতব্য বইটার নাম সে দিয়েছে–বাঘ বলেছে খাবো খাবো।

দারুণ নাম ফাটাফাটি নাম ইত্যাদি বলে টলে ওকে এপ্রিসিয়েট করলাম দাঁতে দাঁত চেপে। আর গোপনে সিদ্ধান্ত নিলাম–মিয়া আমারে থ্রেট করো! তুমি জানো না? আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে আমাকে অবজ্ঞা অসম্মান বা হেয় করলে প্রতিশোধ নেই আমি নগদে? আমার প্রতিশোধটা মারামারি কাটাকাটি না। নিজের লেখালেখির পরিমানটা বাড়িয়ে দিয়ে আরো ভালো কিছু ছড়া লিখে, আরো ভালো কিছু গদ্য লিখে কন্সপ্রেসি-হিংসা-ছোটোলোকি আর হুমকির জবাব দিই আমি। এটা আমার বহুৎ পুরানা অভ্যেস।

রোমেন আমাকে ভূতের ছড়ার সিরিজ লিখবে বলে হুমকি দিয়েছে। জবাবে আমি ওর বাঘের সিরিজকে ‘ডিস্টাপ’ করতে ছোট্ট একটা ল্যাং মারার কোশেশ করলাম। (কী রোমেন? দিবা আর হুমকি? যদি সঠিক লাইনে না আসো তাইলে কিন্তু আমিও একটা বাঘের ছড়ার সিরিজ চালু করুম! এই যে দেখো নমুনা। গতকাল তোমার সঙ্গে কথা শেষ করেই এপাং ওপাং ঝপাং করে নামিয়ে ফেললাম তরতাজা একটা হালুমের ছড়া। বাঘের ছড়ার বই লিখলে নাম দেবো–লালবাগের লাল বাঘ।। কিংবা লালবাগের লাল বাঘের লাল জামা। কি মিয়া? আর দিবা হুমকি?)

নতুন এই ছড়াটা উৎসর্গ করছি চট্টগ্রামের ছড়াবন্ধু রাশেদ রউফকে।

এই যে ছড়াটা–

ও বাঘ মামা…

লুৎফর রহমান রিটন

আমার মায়ের ভাই হয় বাঘ
তাই তো সে বাঘ মামা,
হলুদ কালো ডোরায় আঁকা
মামার গায়ের জামা।
মামা আমার বড্ড রাগী
খামোখা যায় রেগে,
রাগলে মামা সবাই পালায়
দৌড়ে ঝড়ের বেগে।
মামা যখন গর্জে উঠে
হালুম হালুম করে–
বনটা কেমন কেঁপে ওঠে
ভয়াল থাবার ডরে!
হরিণগুলো এদিক সেদিক
দৌড়ে পালায় দ্রুত,
বনের পশু-পাখিরা হয়
বেদনা-আপ্লুত।
বাঘ মামাকে সমঝে চলে
বনের পশু-পাখি,
এমনকি বোন বাঁধতে চায় না
বাঘের হাতে রাখি…
ও বাঘ মামা ভয় দেখিয়ে
লাভটা কি হয় বলো!
তারচে ভালো তুমি সবার
বন্ধু হবে, চলো।
বনটা তোমার একার তো নয়!
বনটা সবার, নাকি?
চলো সবাই মিলেমিশে
বন্ধু হয়েই থাকি!
তোমার পিঠে চড়ে আমি
ঘুরবো বনে বনে,
ভয় ভীতি নয় শান্তি আসুক
পশু-পাখির মনে।
ও বাঘ মামা রাগটা কমাও
এমন খুশির দিনে,
রাগ কমালে দেবো একটা
রঙিন জামা কিনে।
হলুদ কালো ডোরার জামা
পরবে তুমি কতো?
রঙিন জামা চাও না তুমি
প্রজাপতির মতো?
নীল নেবে? না সবুজ নেবে?
চাই টুকটুক লালও?
রাগটা তোমার কমাও না প্লিজ!
বাঘ মামা খুব ভালো।
নেংটু তুমি? পেন্টু নেবে?
লজ্জা পাচ্ছো মামা!
তোমার গায়ে পরিয়ে দেবো
টুকটুকে লাল জামা……

অটোয়া ০৭ মার্চ ২০২৩

- Advertisement -

Read More

Recent