বৃহস্পতিবার - এপ্রিল ২৫ - ২০২৪

ফেসবুকে গিয়ে দেখলাম কিছুই হচ্ছে না

ছবিব্রুস হোং আনসপ্লাশ

কিছু দিন আগে ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম ইত্যাদি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। আমি ফেসবুকে গিয়ে দেখলাম কিছুই হচ্ছে না। কারো পোস্টে লাইক দিতে গিয়ে দেখলাম লাইক নিচ্ছে না। কমেন্ট লেখে পোস্ট করতে গিয়ে দেখি কমেন্ট পোস্ট হচ্ছে না। ফেসবুক কয়েকবার লগ ইন লগ আউট করলাম। তারপরেও কোন সমাধান পেলাম না। এর পর ভাবলাম, আমার মোবাইলে সমস্যা। তাই মোবাইল অফ অন করে দেখলাম কিন্তু সব আগের মতই।
এর পর গুগল সার্চ দিয়ে বুঝতে পারলাম ফেসবুক নেটওয়ার্কে কোন সমস্যা হয়েছে। ফেসবুক কতৃপক্ষ এর জন্য এপোলজি চেয়ে দ্রুত তা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে।
আমার মাথায় একবার খেলে গিয়েছিল হয়ত প্রযুক্তিতে উন্নত কোন দেশ বা একাধিক উন্নত দেশ এক হয়ে ফেসবুককে পুরোপুরি স্থায়ীভাবে ক্রাশ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
মাথায় এই বিষয়টি ক্ষনিকের জন্য খেলে যাওয়ার কারন হিসাবে অনেকগুলি বিষয় ছিলঃ
১) ফেসবুক আসক্তি বিশ্বের অসংখ্য মানুষকে একটি বড় সময়ের অপচয়ের গন্ডির মধ্যে বেধে ফেলেছে। যারা আসক্ত তারা কারনে অকারনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অধিকাংশ সময় এই ফেসবুকেই কাটিয়ে দেয়।
২) ফেসবুক আসক্তির কারনে কর্মজীবন, পারিবারিক জীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফেসবুক আসক্তরা পরিবারকে যতটুকু সময় দেওয়ার কথা ততটুকু সময় দিচ্ছে না। যে সময়টা আসক্তরা ফেসবুকে ব্যয় করছে সেই সময়টা হয়ত তার পরিবার এবং সন্তান সন্ততিদের জন্য প্রাপ্য ছিল।
৩) ফেসবুক আসক্তির কারনে কর্মজীবনেও মনোযোগ ব্যহত হচ্ছে। সারাক্ষন ফেসবুক চিন্তা, ফেসবুকে কৌতুহল ফেসবুক আসক্তদের মনোযোগ কর্মজীবন থেকে সরিয়ে অনেকটাই ফেসবুকে বেধে রাখছে। ফলে যে সময়টা ফেসবুকে ব্যয় করা হচ্ছে সেই সময়টা কর্মজীবন এবং পারিবারিক জীবনে ব্যয় করলে কর্মজীবন/ পারিবারিক জীবন উভয় ক্ষেত্রেই উৎকর্ষ সাধন হতো।
৪) ফেসবুক আসক্তির কারনে পারিবারিক এবং দাম্পত্য জীবনে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। ফেসবুক অবাধ সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্র হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে কলহ, বিবাদের সূত্রপাত হচ্ছে। দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি ঘটা, এমনকি দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটার ক্ষেত্রেও ফেসবুক আসক্তি অনেক সময়ই দায়ী হিসাবে গন্য হচ্ছে। এর জন্য নারী পুরুষ উভয়েই দায়ী। ফেসবুক অবাধ সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্র হওয়ায় দাম্পত্য সম্পর্কের বাইরেও অন্য সম্পর্ক গড়ে উঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ডিভোর্স, সেপারেশন, সম্পর্কে অবিশ্বাস ইত্যাদি সৃষ্টি হচ্ছে।
৫) ফেসবুকে আসক্ত বাবা মা সন্তানদেরকে অবহেলা করার কারন হচ্ছে। সন্তান সন্ততি অনেক সময়েই বাবা মার সান্নিধ্য আশা করে। তাদের সংগে সময় অতিবাহিত করে ব্যক্তিগত অনেক বিষয় শেয়ার করতে চায়। বাবা মার সংগে সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার মূহুর্তটুকু কাটাতে চায় কিন্তু ফেসবুকে আসক্ত বাবা মার কাছে অনেক সময়ই এই বিষয়গুলি উপেক্ষিত হয়। কারন তাদের মন পড়ে রয়েছে ফেসবুকের দিকে।এমনো হতে পারে আপনার সন্তান কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু আপনাকে বলতে এসেছিল কিন্তু ফেসবুকে আপনি ব্যস্ত দেখে সে ফিরে গেছে। তাই ফেসবুক পারিবারিক এবং দাম্পত্য বন্ধন শিথিল হবার কারন হচ্ছে।
৬) ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক সময় সম্পর্কে সম্পর্কে বৈরীতা, বিসংবাদ, বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে ।ফেসবুকের মাধ্যমে যেমন একসাথে অসংখ্য সম্পর্কের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকা যায় তেমনি আবার এর উল্টোটাও দেখা যায়। বেশির ভাগ বিরোধের সূচনা হয় একে অন্যের সাথে মত পার্থক্যের কারনে। আবার ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে হিংসা প্রতিহিংসার কারনেও ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্কে সম্পর্কে বৈরীতা সৃষ্টি হতে পারে।
এটা ঠিক যে ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকের সাথে যুক্ত থাকা যায়। একই সাথে অনেকের সাথে ভাবের আদান প্রদান একমাত্র ফেসবুকের মাধ্যমেই সম্ভব। তবে যখন ফেসবুক ছিল না তখনও কিন্তু মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ থেমে ছিল না। ফেসবুক না থাকার সময়টার সাথে তুলনা করলে যে কেউ ফেসবুক থাকার সময়টা ভালো না মন্দ তা তুলনা করতে পারেন।
সোস্যাল মিডিয়া আর্শীবাদ না অভিশাপ তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ফেসবুক থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেছি কয়েকবার কিন্তু বার বার ব্যর্থ হয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে ফেসবুকের বাইরে একটা বিশাল এবং বিস্তৃত জগত আছে। ফেসবুকের গন্ডিতে বন্ধি থাকার কারনে সেই বিশাল জগতটা দেখা হয় না চোখ মেলে, সেখানে আমার বিচরন সীমিত হয়ে যাচ্ছে।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent