শুক্রবার - এপ্রিল ১৯ - ২০২৪

ফেসবুক আসক্তি

ছবিদাউদ সাকোলস্কি

ফেসবুক আসক্তি অবশ্যই ভালো নয়। এই আসক্তির কারনে একজনের জীবনের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এই জন্য নিয়ন্ত্রিত ফেসবুক ব্যবহার করা যেতে পারে। ফেসবুকে কখন আসবেন আর কখন ফেসবুকের বাইরে থাকবেন, এই দুটি বিষয় রুটিন করে নিলে অনেক মূল্যবান সময় বেঁচে যেতে পারে।

- Advertisement -

তবে ফেসবুক থেকে নিজেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া খুব কঠিন একটা ব্যাপার।

ফেসবুকের মাধ্যমে যে connectivity তৈরি  হয় তা অন্য কোন মাধ্যমে এইভাবে সম্ভব নয়।অন্তত আমাদের মতো ৪০-৬০ বছর বয়স যাদের তাদের জন্য ফেসবুক অনেকটাই সুবিধা করে দেয়। ফেসবুকে connected  থাকলে মনে হয় আমার পরিচিত সবাই খুব কাছাকাছি আছে। মনে হয় আমার নিকটজন যারা তারা আমার সাথে সংযুক্ত রয়েছে। তাদেরকে আমি শারীরিকভাবে না হোক, ভার্চ্যুয়ালি দেখতে পাই,ভার্চুয়ালি অনেকের সাথে সংযুক্ত থাকি।

দুই একবার ফেসবুক ডিএক্টিভেট করে দেখেছি। ডিএক্টিভেট করার পর খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা হয়নি। নিজেকে খুব  একা মনে হয়েছে। মনে হয়েছে সবাই অনেক দূরে সরে গিয়েছে। আমি হঠাৎ করেই কেমন যেন একা হয়ে গিয়েছি। মনে হয়েছে হঠাৎ করে  সবার সাথে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

এমন অভিজ্ঞতার পর ফেসবুক আর ডিএক্টিভেট করার ইচ্ছা মনে আসেনি।

মনে হয়েছে, ফেসবুক  ডিএক্টিভেট করা কি দরকার? ফেসবুক এক্টিভ থাকুক। আমি ফেসবুকে আমার আসা-যাওয়া কমিয়ে দিলেই হয়। যখন ইচ্ছে হলো  আসলাম আর যখন ইচ্ছে হলো আসলাম না। তবে এই আসা-যাওয়াটা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। ফেসবুকে enter /exit এর রিমোট কন্ট্রোল আপনার হাতে থাকা উচিত।ফেসবুক যেন আপনার enter/exit এর নিয়ন্ত্রণ না নিতে পারে সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।আপনার রিমোট কন্ট্রোলটা  ফেসবুকের  হাতে দেওয়া যাবে না।

আমি লক্ষ্য করেছি, আজকালকার ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে খুব একটা আগ্রহী নয়। তারা বরং ইন্সট্রাগ্রাম নিয়েই বেশি থাকে। তাদের জগতটা আমাদের জগত থেকে আলাদা। তারা অন্যান্য দিকে সময় বেশি দিচ্ছে। ফেসবুক তারা একেবারেই যে ব্যবহার করে না  তা নয়, তবে আমাদের চেয়ে অনেক কম ব্যবহার করে। তারা হয়ত তাদের priority time কোথায় কোথায় দিতে হবে তা তারা fix করতে পেরেছে। সেখানে ফেসবুক তাদের priority তালিকায় অনেক নিচে স্থান পাবে হয়ত বা। তাদের আসক্তি অন্য দিকেও থাকতে পারে। যেমন: সব সময় ভিডিও গেম নিয়ে পড়ে থাকা।

আমাদের ক্ষেত্রেই এই ভিন্নতা। আমাদের priority time এর শীর্ষে আছে ফেসবুক ব্যবহার করা। অথবা আমরা priority time কোথায় কোথায় দিতে হবে সেটাই নির্ধারণ করতে পারিনি এখনো।

এটি নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে।

ফেসবুকে যে সময়টা আমরা দিচ্ছি তা কি অন্য মূল্যবান সময়কে cartel করে এখানে দিচ্ছি? তেমন হলে অবশ্যই এই pattern  থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। তানাহলে, একমাত্র ফেসবুকের কারনেই দেখা যাবে আপনার জীবন থেকে অনেক মূল্যবান সময় অহেতুক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর যে সময় একবার চলে যায় তাকে তো আর ফিরিয়ে আনা যায় না।

অনেকেই আছেন যারা ফেসবুকে খুবই নিরাসক্ত। অনেকেই আছেন  ফেসবুকে কালেভদ্রে আসেন। আবার অনেক মানুষের ফেসবুক একাউন্টই নেই। অনেকে ফেসবুক ব্যবহারে একেবারেই পারদর্শী নয়।

এদের জীবন কি থেমে আছে?  নিশ্চয়ই না। কোন সার্ভে হলে এই মানুষগুলি ফেসবুক ছাড়া কেমন আছে তা জানা সম্ভব হতো।

মোদ্দা কথা হচ্ছে, ফেসবুক ব্যবহার করুন কিন্তু আসক্তির দাসত্ব বরণ করা থেকে বিরত থাকুন।

এই যে নাতিদীর্ঘ লেকচার দিলাম, এই লেকচার কতটুকু পালন করতে পারবো তা নিয়ে আমি নিজেও সন্দিহান। লেকচার দেওয়া সহজ কিন্তু নিজের জীবনে পালন করা কঠিন।

তবে অতি অবশ্যই বলে রাখা ভালো,ফেসবুক কে কিভাবে ব্যবহার করবেন তা যার যার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।

ফেসবুক প্রসংগে প্রথম আলো থেকে নেওয়া সাংবাদিক আনিসুল হকের কিছু লেখা নিচে শেয়ার করলাম।উদ্দেশ্য,  একটা চৌম্বক ধারণা দেওয়া ফেসবুক আসলে কেমন:

ফেসবুকে একটা কৌতুক দিলে তার নিচে কী ধরনের মন্তব্য পড়ে, তার একটা সম্ভাব্য তালিকা প্রণয়ন করেও দিয়েছিলাম। সেটাই হয়তো বেশি অভিনিবেশ দাবি করবে।

“একটা কাক গাছের ডালে চুপচাপ বসে আছে। নিচে একটা মুরগি দৌড়াদৌড়ি করছে।

মুরগি বলল, আমাকে খাবার জোগাড় করার জন্য কত পরিশ্রম করতে হয়। আর তুমি তো আরামে বসে আছো।

কাক বলল, তোমার শখ হলে তুমিও বসে থাকো।

মুরগি চুপ করে বসে রইল। একটা শেয়াল এসে মুরগিটাকে খেয়ে ফেলল।

কাক বলল, কাজ না করে চুপচাপ বসে থাকতে হলে যথেষ্ট ওপরে বসতে হয়।

এই কৌতুক শোনার পরে যেসব কমেন্টস আসবে: ১. পুরোনো কৌতুক। উদাস হয়ে গেলাম।

২. নিচেরটা মুরগি নয়। ওটা খরগোশ ছিল।

৩. এই জোকস আপনি লেখেন নাই। আপনি তো মিয়া অন্যের লেখা নিজের বলে চালাইলেন।

৪. কাক কখনো কথা বলতে পারে না। মুরগিও পারে না।

৫. অ্যাড মি অ্যাড মি অ্যাড মি…

৬. ঘরে বসে টাকা আয় করুন…

৭. মুরগি কেন বললেন, মোরগও তো বলতে পারতেন।

৮. এইটা কোনো জোকস হইল?

৯. লুল… (এল ও এল নয়। লুল)

১০. …মুদ্রণযোগ্য নয়

১১. …মুদ্রণযোগ্য নয়…

ফেসবুক ভালো কি খারাপ, এটা বলার আমি কে? তবে পুরোনো কথাটাই আবার বলতে পারি, যেকোনো যন্ত্রই ভালো, যদি আমি তা ভালো কাজে ব্যবহার করি। যেকোনো যন্ত্রই আবার খারাপ হতে পারে, যদি সেটার আমি ভুল ব্যবহার করি।

বার্ন ইউনিটে একজন এসেছেন, তাঁর কান পুড়ে গেছে। ডাক্তার বললেন, কীভাবে পুড়ল?

ডাক্তার সাহেব, ফোন বাজল, আমি ফোনটা তুলে কানে নিলাম, তখনই পুড়ে গেল?

ফোন কানে দিতেই কান পুড়ে গেল!

ডাক্তার সাহেব, ভুল করে গরম ইস্তিরিটাকে কানে ধরেছিলাম।”

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent