বুধবার - ডিসেম্বর ৬ - ২০২৩

শীতকালের শুরু তুষার ঝড় দিয়ে

বাইরে তুমুল বাতাস। গমগম ঝমঝম  শব্দ ক্রমাগত বাজছে। কদিন ধরে ঝড়ের সর্তকতা দেয়া হয়েছে আবহাওয়া বিশারদদের পক্ষ  থেকে। তার বাস্তবতা দেখছি, ঘরে  বসে জানালায় তাকিয়ে সকাল থেকে। সারারাত তুষারপাত হয়েছে এখন আশি, একশ কিলোমিটার বাতাসের বেগে ধূলিকণার মতন উড়ছে তুষার। এত্ত সাদা চারপাশ তাকিয়ে থাকলে চোখ ক্লান্ত হয়ে যায়। কিছুই আর চোখে পরে না। সাদার ভিতর বিলীন হয়ে যায় দৃষ্টি। যত দক্ষিণে তত খারাপ অবস্থা।

- Advertisement -

গত কয়েক বছর ধরে শীতকালটা অদ্ভুত ব্যবহার করছে । যত বরফপাত হওয়ার কথা তেমন হচ্ছে না। আর যেখানে বরফই কখনো পরে না সেদিকে ডুবে যাচ্ছে বরফে।

এবছর ইউরোপে প্রচুর বরফ পরেছে এই সময়েই। গত সপ্তাহে পশ্চিমে ব্রিটিশ কলম্বিয়া আর লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকা প্রায় পঁচিশ সেন্টিমিটার বরফের নিচে ডুবে গেছে। সাধারনত এসব এলাকায় ছিটে ফোঁট বরফ পরে কি পরে না।

আর এখন যে ঝড় আসছে তা আসছে দক্ষিণ দিক থেকে শিকাগো ইলিয়ন স্টেইট থেকে। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ চলে গেছে। বিদ্যুত ছাড়া এই শীতকাল কিযে ভয়াবহ। যারা থাকেন এমন শীতের দেশে তারাই বুঝতে পারবেন। আর বিদ্যুতের উপর নির্ভর করে এখন খাওয়া দাওয়া সব কিছু। বিশাল মানুষের আনন্দ উৎসবের সময়ও বড়দিন দু বছর পর স্বাভাবিক ভাবে আয়োজন চলছিল এ বছর তাও মনে হয় থামিয়ে দিবে এ ঝড়। কেউ কারো বাড়ি যেতে পারবে না। বিদ্যুৎবিহীন বাড়ির মানুষ সেল্টার গুলোতে চলে যেতে বাধ্য হবে। গতকাল থেকে শুনছি অনেক প্লেন চলা বাতিল হয়েছে, খারাপ আবহাওয়ার জন্য। অনেক মানুষ অর্ধেক পথ উড়ে গিয়ে আটকে আছে বাচ্চাকচ্চাসহ এয়ারপোর্টে। অনেকে উপায়ন্ত না পেয়ে ক’জন মিলে গাড়ি ভাড়া করে বাকি পথ পারি দিচ্ছে। কিন্তু যাদের উড়া ছাড়া যাবার পথ নেই তারা এ ঝড়ের কারণে বড়দিনের আনন্দ নিয়ে এয়ারপোর্টে কাটাবে।

গতকাল অবশেষে শীতকাল শুরু হলো। যদিও শীতের মাঝে ডুবে আছি গত সাড়ে তিন মাস থেকে। ঘর গরম রাখতে হচ্ছে প্রতিদিন হিটার চালু রেখে। কখনো এক দুদিন হয় তো বেশ গরম পরত আঠার বিশ উষ্ণতা দিনের বেলা । কিন্তু রাতের বেলায় চলে যেত মায়নাসের কাছাকাছি তাই হিটার ছাড়া উপায় নাই।

আজকের প্রথম শীতের দিনটি শীতকালিন তুষার ঝড়ের আবহ দিয়ে শুরু হলো।

প্রচুর সতর্কতার পরও অনেক মানুষ রাস্তায় বের হয়েছে আর রাস্তার উপর প্রায় একশ গাড়ির পাইল আপ ক্রাশ হয়ে গেছে এছাড়া আরো ছোট খাটো অনেক  সিঙ্গেল দূর্ঘটনা ঘটছে যার সবটা খবরে পাওয়া যায় না।

গত দুদিন ধরে দেখছিলাম গ্রোসারী দোকানগুলো মানুষের সমাগমে ভরপুর। দুটো কারণ বড়দিন উপলক্ষে কেনাকাটা আর এই দূর্যোগে যেন রাস্তায় নামতে না হয় সেজন্যও অনেকে বাজারে গিয়েছিল। আমাকে যেতে হয়েছিল অল্প কয়েকটা জরুরী জিনিস কিনতে গ্রোসারী দোকানে, মনে হলো যেন কোভিট শুরুর সময়ের মতন লাইন আপ চেক আউট করার সময়। পুরো পৌনে একঘন্টা কেটে গেল দাম মিটিয়ে বেরিয়ে আসতে।

কোভিটের সময় আমার গ্রোসারী দোকানে যেতেই ভয় লাগত এই অপেক্ষার সময়ের জন্য। কিন্তু আর সব কেনাকাটা বাদ দিলেও খাওয়া দাওয়ার বাজার করতে যেতেই হতো মাঝে মধ্যে। প্রথম দিকে ভয় ছিল কিছু বুঝি পাওয়া যাবে না। পরে দেখলাম গ্রোসারী সাপ্লাই ঠিকঠাক মতনই আসছে। তাই আর অতংকিত হওয়ার কিছু ছিল না।

তবে ডিম, রুটি, দুধের মতন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যা সপ্তাহের জন্য কিনতাম তা দু সপ্তাহের জন্য একবারে নিয়ে আসতাম, যাতে লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করতে না হয়।

গতকালও দেখলাম অনেকগুলো সেলফ খালি হয়ে আছে। চাহিদা মোতাবক যোগান নাই।

সাপ্লাই চেনের উপর বিশাল প্রভাব পরেছে বিশ্ব জুড়ে করোনার জন্য। এবং পরবর্তি সময়ে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধও মানুষের জীবনটাকে নানা ভাবে অতিষ্ট করে তুলছে।

কিছুদিন আগে সকালবেলা কাজে যাওয়ার জন্য রাস্তায় নামার পর ঝকঝকে সকালে মাঠ থেকে উঠে আসল একটা হরিণ, তাকে কোন রকমে কাটিয়ে দুই ফিট এগুতেই। বুম বিশাল শব্দের সাথে থেমে গেল গাড়ি। অন্য আবেকটা হরিণ গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছে পাশ থেকে দেখার বুঝার আগেই। হরিণ নিজেও অক্কা পেল আর আর গাড়ির বারোটা বাজিয়ে দিল। ঠিকঠাক ভাবে চলা গাড়িটা এমন অসুন্থ করে দিল যা আর চলার উপযুক্ত রইল না।

একমাস হাসপাতালে আছে বেশ কিছু পার্টস বদল করা হয়েছে এখন একটা পার্টসের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে সেটা পেলেই গাড়ি ঠিক হবে কিন্তু ঐ যে বললাম সাপ্লাই চেনের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে, সে জন্য পার্টস পাওয়া যাচ্ছে না। কতদিন লাগবে তাও বলা যাচ্ছে না।

এখনে একটা সুবিধা আছে ইনসরেন্স থেকে গাড়ি পাওয়া যায়। যদি আপনার সে রকম পুরো ইনসরেন্স থাকে। তা না হলে কি করা যেত।

গাড়ি ছাড়া যেখানে এক কদম চলার উপায় নাই।

নতুন একটি গাড়ি আগে শো রুমে গিয়ে দেখে সাথে সাথেই কিনে নেয় যেত। বেশি অপেক্ষা করতে হলে সপ্তাহ খানেক লাগত। এখন ছয়মাস এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে একটি গাড়ি পাওয়ার জন্য।

সহজ গতিশীল গ্লোবাল বিনিময়ের সমৃদ্ধ সময়টা কেমন যেন নিস্তরঙ্গ হয়ে যাচ্ছে।

একদিকে মানুষের চাকরি চলে যাচ্ছে যথেষ্ট আয় কোম্পানি করতে পারছে না বলে অন্য দিকে আধুনিক প্রযুক্তির আগমনে।

করোনা কালে শুরু হয়েছে সেলফ চেক আউট সিস্টেম দোকান গুলোতে। কেউ কারো জিনিস স্পর্শ করবে না। তাক থেকে উঠিয়ে নিজের জিনিস নিজে দাম মিটিয়ে কিনে নিচ্ছে ক্রেতা। দোকান গুলোতে এমন কি ডলার স্টোর যেখানে এক ডলারে জিনিস কিনতে পাওয়া যায়  বর্তমানে ডলার স্টোরেও জিনিসের দাম পাঁচ ডলার পর্যন্ত হয়ে গেছে এবং গুণগত মান খুব বাজে।  সেখানেও বসে গেলো লাইন দিয়ে সেলফ চেক আউট মেশিন। একটি কি দুটি সেলসম্যান এখন কাজ করে, যেখানে আগে দশ বারোজন এক সাথে কাজ করত।

মেশিন কাজ করে দিচ্ছে, মানুষের চাকরির জায়গা কমে যাচ্ছে।

যথেষ্ট আয় কোম্পানি করতে পারছে না এই কথাটা কিন্তু ঠিক না কোম্পানি গুলোর আয় বেড়েছে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। এমপ্লয়ি ছাঁটাই হয়েছে মেশিন কাজ করছে। বেতন দিতে হচ্ছে না সব আয় মালিকের পকেটে যাচ্ছে।

বাইশ সাল সময়টা কেমন যেন চলে গেল খুব দ্রুত। যুদ্ধটা শুরু হয়ে ছিল বছরের গোড়ার দিকে মানুষের আশা ছিল থেমে যাবে দ্রুত। কিন্তু মনে হচ্ছে এ আরো দীর্ঘ সময় ধরে চলবে। অকারণ মানুষকে আরো নানা রকম ঝামেলায় ফেলবে।

নতুন বছর আশার আর সাতদিন মাত্র বাকি। আমরা অনেক শুভকামনা করব কিন্তু নতুন বৎসর কি নিয়ে আসবে আমাদের জন্য তা জানবে কয়েকজন মানুষ যারা নিজেদের ভালোলাগার জন্য অগুনতি মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে ভালোবাসে।

তবু গতানুগতিক শুভকামনা সুন্দরের অপেক্ষা করি। হয়তো অগুনতি মানুষের শুভআশায় গুটি কয়েক খারাপ মানুষের খারাপ চিন্তাটা উড়ে চলে যাবে, সুখ সমৃদ্ধি ছড়িয়ে পরবে বিশ্ব জুড়ে।

টরন্টো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent