শুক্রবার - এপ্রিল ২৬ - ২০২৪

প্রিয় শহর, প্রিয় মানুষ

এই ক্যালগারি শহরেও আমার আছে অনেক অনেক প্রিয় মানুষ যাদের সান্নিধ্য আমি উপভোগ করি তাদের সাথে বসে কথা বললে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায় তালিকা করলে রিপন রশিদ তাঁদের মধ্যে প্রথম দিকে থাকবে তাতে সন্দেহ নাই

ক্যালগারিতে পা রাখি ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তার আগে টরন্টোতে আট বছরের প্রবাস জীবন, সেখানে অনেক প্রিয় মানুষ, অনেক প্রিয় স্মৃতি। আমার প্রিয় স্মৃতিগুলোর বেশিরভাগই মানুষকে ঘিরে। একটা শহর নানা কারনে আমাদের প্রিয় হয়ে ওঠে। তবে, যত কারনই থাক, মানুষ যদি প্রিয় না হয়, তো বাদবাকী সবকিছু যোগ করেও সেই শহরে টিকে থাকা কষ্টকর হবে। এটা আমার কথা। এই ক্যালগারি শহরেও আমার আছে অনেক অনেক প্রিয় মানুষ, যাদের সান্নিধ্য আমি উপভোগ করি, তাদের সাথে বসে কথা বললে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। তালিকা করলে রিপন রশিদ তাঁদের মধ্যে প্রথম দিকে থাকবে তাতে সন্দেহ নাই। এখানকার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। এ মাসের শুরুতে অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটি নির্বাচিত হয়েছে, তাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে তিনি চলে যাবেন। করোনা বহু ক্ষতি করে গেছে আমাদের, তেমন একটা ক্ষতি হলো রিপন রশিদের লিডারশিপ স্কিলকে সেভাবে বিকশিত হতে না দেওয়া।

রিপন রশিদের খুব কাছে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার প্রথম বই “টনির আমেরিকা প্রত্যাবর্তন”-এর মোড়ক উন্মোচনকে কেন্দ্র করে,  ২০১৬ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে জেনেসিস সেন্টারে। পুরোনো অ্যালব্যামে এখনও দেখি, রিপন রশিদ আর রীতা কর্মকারের মাঝে আমি, একপাশে আবীর খন্দকার, আরেক পাশে জুবায়ের। শহরে একেবারে অপরিচিত একজন লেখককে টেনে সামনে নিয়ে আসার কাজটি অ্যাসোসিয়েশন করেছিল, কেবল আমার বেলায় তো না, আমি দেখেছি, যে কেউ বই প্রকাশ করলে অ্যাসোসিয়েশন তাঁদের সামনে নিয়ে আসে। এরপর থেকে প্রতিবছর নিয়ম করে রীতা কর্মকারের ফোন আসে, জানতে চায় এবারে কোন নতুন বই আসছে কি না। তো, সেই শুরু। তারপর নানা কর্মকান্ডে রিপন রশিদকে দেখেছি প্রাণ উজাড় করে কাজ করতে। তবে, তাঁর যে গুন আমাকে মুগ্ধ করে রাখে, সেটি শৃঙ্খলাবদ্ধতা। বিশৃঙ্খলা যদি প্রাকৃতিক হয় তো শৃঙ্খলা হচ্ছে শিল্প, মানুষ একে সৃষ্টি করেছে, আয়ত্ত্ব করেছে, এবং সমৃদ্ধ করেছে। রিপন জানে কখন রাশ টেনে ধরতে হয়। গড্ডালিকার প্রবাহ কতক্ষণ ধরে চললে তা মানুষকে পীড়িত করে, সেটা তিনি খুব ভালোভাবে অনুভব করেন এবং রাশ টেনে ধরতে দ্বিধা করেন না। এর প্রমান বহুভাবে তিনি দিয়েছেন। তিনি তো সেইজন যিনি অনুভব করেন, প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে শ্রদ্ধা লাভ করার, দু-এক জনের জন্য শত শত মানুষ প্রতিষ্ঠানের উপর বা কোন অনুষ্ঠানের উপর বীতশ্রদ্ধ হবে, সেটা কোন গণতন্ত্র না; রিপন এখানে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকার পাত্র নন।

- Advertisement -

আর আপনি যদি তাঁকে বলেন, ঠিক ৭টায় মির্চিতে বুকিং করে রেখেছি, সপরিবারে আসবেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার এবং আপনার পরিবারের সাথে একটু সময় কাটাতে চাই, আপনি অবশ্যই আগেভাগে সেখানে পৌঁছে ঘড়ির কাঁটার দিকে খেয়াল রাখবেন। ৭টা? হুম, এবার মুখ তুলে দেখুন, তিনি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে।

সেদিনের সন্ধ্যাটা এমনই ছিল। ভাবির হাতে হলুদ গোলাপ, আমাদের প্রিয় রঙ। আমরা খেতে খেতে অনেক বিষয় নিয়ে গল্প করলাম। এক সাধারণ সন্ধ্যা এভাবেই অসাধারণ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো। আপনার জীবনে ভালো খাবারের দরকার আছে, তারচেয়ে বেশি দরকার ভালো মানুষদের, যাদের উপস্থিতি যেকোন সময়কে অসাধারণ করে দিতে পারে। ধন্যবাদ রিপন রশিদ। আপনাকে কে কীভাবে মনে রাখবে জানি না, আমরা রাখবো; প্রেসিডেন্ট তো বটেই, একজন খুবই অসাধারণ মানুষ হিসেবে।

ক্যালগেরি, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent