শুক্রবার - এপ্রিল ১৯ - ২০২৪

এমবাপ্পে বিশ্বকাপে ফরাসি বিপ্লব

সুদর্শন কৃষ্ণকায় যুবকটি ক্লাব ফুটবলে বাংলাদেশের দর্শকের চোখে খানিকটা পিছিয়ে। কেননা, লিওনেল মেসি এবং নেইমার জুনিয়র একই টিমে তাঁর আক্রমনের সঙ্গী। তাঁদের নামের ভারে জটিল উচ্চারণের কিলিয়ান এমবাপ্পের নামটি বারবার অনুল্লেখ থেকে যায়।

- Advertisement -

ফরাসি লীগে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইন বা পিএসজি ক্লাব সাজানো হয়েছে দুনিয়ার সেরা তারকা খেলোয়াড় দিয়ে। বিশেষ করে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির মালিক নাসের বিন গানিম আল খেলাইফি পিএসজি কেনার পর বড় তারকা টানার প্রবণতা বেড়ে যায় দলটির।

সুপার তারকার ভিড়ে যখন সুঠামদেহী যুবকটি তাম্রকঠিন পায়ে ড্রিবলিং করে ডি-বক্সে ঢোকে, তখন বুঝতে বাকী থাকেনা কতোটা দুর্ধর্ষ খেলোয়াড় সে। অনেকেরই ধারণা কৃষ্ণকায় যুবকটি এবার বিশ্বকাপে ফরাসি বিপ্লব ঘটাবে… টানা দুবার বিশ্বকাপ জিতে। কাতার থেকে কাপ অন্য কোথায় যাবেনা। ফ্রান্সের ঘরেই ফিরে যাবে। বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে তিন গোল করে বিপ্লবের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে এমবাপ্পে।

জন্মই হয়েছিলো খেলার জন্য। হবে নাইবা কেনো? বাবা এবং মা দুজনই খেলোয়াড় ছিলেন। বাবা উইলফ্রেড ছিলেন ক্যামেরুনের মানুষ। পেশায় ছিলেন ফুটবল কোচ। মা আলজেরিয়ান কাবিল আদিবাসী বংশোদ্ভূত ফায়জা লামারি। পেশাদার হ্যান্ডবল প্লেয়ার ছিলেন। প্যারিসে তাঁদের পাতা সংসারে এমবাপ্পে জন্ম নেন ২০ ডিসেম্বর ১৯৯৮। পরে অবশ্য বেড়ে ওঠেন বঁদি নামক প্যারিসের উপশহরীয় এলাকায়।

লিওনেল মেসির মতো তাঁর ফুটবল যাত্রা শুরু হয় বাবা উইলফ্রেডের হাত ধরে। বাবা তখন এএস বঁদি ক্লাবের ফুটবল কোচ। সেখানে আন্তোনিও রিকার্দি নামের আরেকজন কোচ ছিলেন। তাঁর অধীনে এমবাপ্পের ইয়ুথ কোচিং শুরু হয়। অথচ ওর বয়স তখন মাত্র ছয় বছর! অবিশ্বাস্য ব্যাপার! কেনোনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী ইয়ুথ এজ’ শুরু হয় ১৫ বছর বয়সে।

এমবাপ্পের ব্যাপারে আন্তোনিও রিকার্দি একটি আক্ষেপ করেছেন। এমবাপ্পে কখনো নিজের ‘বয়স গ্রুপে’ খেলতে পারেনি। সবসময়ই ওর চেয়ে বড় বয়সি ছেলেদের সাথে ওকে খেলতে হয়েছে। ১১ বছর বয়সে ডাক আসে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে। তবে খেলার জন্য নয়। বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে। ১৪ বছর বয়সে ইংলিশ লীগের চেলসি ক্লাবে ডাক পান ওঁদের ইয়ুথ টিমে খেলার জন্য।

২০১৫ সালে বয়স যখন সতেরো, পেশাদার লীগ খেলতে এমবাপ্পে বিক্রী হয়ে যায় ক্লাব মোনাকো’র কাছে। দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে একাধিক হ্যাট্রিক করেন মোনাকোর হয়ে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিনে পিএসজি ঘোষণা দেয় তাঁরা ক্লাব মোনাকোর সাথে লোন সাইন করেছে এমবাপ্পেকে দলে খেলাবার জন্য। এক সপ্তাহ পরেই সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখে প্রথম খেলাতেই গোল পান এমবাপ্পে। এরপর থেমে থাকেনি। প্রায় প্রতি ম্যাচে গোল। পিএসজিতে গোলের ক্ষুধা এমবাপ্পেকে দিয়েছে এযাবত সাত সাতটি হ্যাট্রিক।

২০১৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্কোয়াডে ছিলেন এমবাপ্পে। তাঁর দেয়া একমাত্র গোলে পেরুকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় ফ্রান্স। ফ্রান্সের ইতিহাসে বিশ্বকাপে সবচে’ কম বয়সে গোল এটি। এমবাপ্পের বয়স তখন উনিশ। নক আউট পর্বে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারানোর সেই ম্যাচে দুটি গোল এমবাপ্পের পা থেকে। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ২৫ গজ দূর থেকে দেয়া গোল বিশ্বকাপ এনে দেয় ফ্রান্সকে। এই গোল মেশিন যাঁদের বাড়িতে, তাঁরা বিশ্বকাপ ঘরে রেখে দেয়ার আশা করতেই পারে।

ব্রামটন, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent