বৃহস্পতিবার - এপ্রিল ২৫ - ২০২৪

পাকা চুল, টেনশন হচ্ছে? ঝেড়ে ফেলুন…

চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যাটা এখন সর্বত্র। শুধু বাংলাদেশ বলে নয়, এই সমস্যা বিরাজমান পৃথিবীর সব দেশের মানুষের মধ্যে। মূলত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম ও পানির কারণে সবচেয়ে বেশি এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। খাবারে নানা কেমিকেলের উপস্থিতি, পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ পানীয় পান না করায়, তাছাড়া দুঃশ্চিন্তা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতাসহ নানা কারণে অল্প বয়সেই চুল পড়া ও পাক ধরতে পারে।

- Advertisement -

ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য এর আগে বহুবার চুল পড়া নিয়ে বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তবে চুল পাকা রোধে করণীয় কী? এই ধরনের তথ্য কিন্তু পাঠকের খুব কমই জানা। তাই আজ পাঠকদের জন্য আমার আলোচনা থাকবে কীভাবে সহজে চুল পাকা রোধ করা যায়-

চুল পাকার একটা বয়স থাকে, সে বয়সের আগে যদি চুল পেকে যায় তাহলে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। চুল পাকলে সবাই বুড়ো ভাবতে শুরু করে। এমনকি চুল পাকা তরুণদের নিজের বয়সের থেকে অনেক বড় বয়সী গণ্য করা হয়। অনেক তরুণরা আবার এর সমাধান হিসেবে বেছে নেন চুলের কলপ ও বিভিন্ন রঙের কালারকে। তবে আপনারা কী জানেন? সাময়িক এই স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে নিজের চুল নিজেই শেষ করছেন? যারা চুল কালো করতে প্রতিনিয়ত কলপ ব্যবহার করছেন, তাদের চুল কিন্তু খুব বেশীদিনের জন্য কালো হয় না। এমনকি এই কলপের ফলে আপনার মাথার চামড়ার ক্ষতি করছেন আপনি। অনেক কলপের উপাদান বেশ নিম্নমানের, ফলে মাথায় সৃষ্টি হয় অ্যালার্জি। আর এই অ্যালার্জি থেকে চুল পড়ার শুরু হয়।

বয়স কারো জন্য থেমে থাকে না, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়েই চলে। আর এর প্রভাব পড়বে ত্বক ও চুলে, এটা বেশ স্বাভাবিক। বয়স যখন চল্লিশের কোঠায়, তখন আমাদের সবার মাথায়ই কমবেশি দেখা যায় পাকা চুল। তবে ওই নির্দিষ্ট সময়সীমার আগে যখন চুল সাদা হয়, তখনই পড়তে হয় বিপদে। ২৫ থেকে ৩০ বছরে যদি এমনটা হয়, তখন তাকে বলা হয় অকালপক্বতা বা প্রি-ম্যাচিউর গ্রে হেয়ার।

তবে শুধু আমাদের দেশে নয়, এশিয়ান ও আফ্রিকানদের চল্লিশের দিকে আর ইউরোপিয়ান, যুক্তরাষ্ট্রের লোকদের ত্রিশের দিকে গ্রে হেয়ার দেখা দেয়। গ্রে হেয়ারকে সম্মানের মুকুট হিসেবে বিবেচনা করলেও অল্প বয়সে গ্রে হেয়ার দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

অকালপক্বতা (পাকা চুল) কেন হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের চুলের মধ্যে এক ধরনের পিগমেন্ট থাকে। এর নাম মেলানিন। আমাদের ত্বকের কোষগুলো যখন মেলানিন তৈরি বন্ধ করে দেয়, তখনই দেখা যায় গ্রে হেয়ার বা পাকা চুল। পিগমেন্ট প্রোডাকশন বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ, স্ক্যাল্পের ফলিকলে তৈলগ্রন্থি কমে যাওয়া। এতে চুল তার পিগমেন্ট তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। শুধু চুল সাদাই হয় তাই নয়, সঙ্গে দেখা দেয় নানা উপসর্গ। অতিরিক্ত চুল পড়া, আগা ফাটা, চুল ভাঙা ইত্যাদি সমস্যা হয়।

অকালপক্বতার কারণ
অকালপক্বতার প্রধান কারণ, নিউইয়র্কের সেন্টার অব ডার্মাটোলজির ডিরেক্টর ডেভিড ব্যাংক বলেছেন, যদি তোমার পূর্বপুরুষদের অকালপক্বতা থাকে, তবে সেটি তোমারও দেখা দিবে। অকালপক্বতা বংশগত হলে তেমন কিছু করার নেই। তার মতে, গ্রে হেয়ারের প্রধান কারণ জেনেটিক। এছাড়া অনিদ্রা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ধূমপান, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ—এসবই পাকা চুলের ঝুঁকি বাড়ায়। এ কারণে ইদানীং অকালপক্বতা দেখা দিচ্ছে খুব বেশি। দৈনন্দিন জীবনে মানুষের টেনশন বেশি, তাই গ্রে হেয়ারের মানুষও বেশি।

এসবের মধ্যে আরেকটি অভাব আছে মানব শরীরে, তা হলো আমাদের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবারের বড়ই অভাব। বিশেষ করে প্রোটিন, ভিটামিন ডি, আয়রন, ফলিক এসিড, অ্যামাইনো অ্যাসিড, বায়োটিন এসব উপাদান মেলানিন তৈরির জন্য সহায়ক। কিন্তু আমরা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খুবই কম খাই, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অনেক স্টাইল করি; ব্যবহার করি হেয়ার ড্রায়ার, আয়রন স্ট্রেইটনার, ক্ষতিকর কেমিকেল, আর্টিফিশিয়াল ডাই। সব কিছু মিলিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের চুল বিনষ্ট করি। ফলে অকালপক্বতা দেখা দেয়। এছাড়া ক্যান্সারের পেশেন্ট যারা, তাদের কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, টক্সিক মেটাল বিষক্রিয়ার প্রভাবও চুলের স্বাভাবিক রং হারানোর জন্য দায়ী।

তবে চুলের খুশকিকে আমরা সাধারণ সমস্যা (যাচ্ছেতাই) মনে করে উড়িয়ে দিই। কিন্তু আমরা কি জানি, এই খুশকির কারণেও চুল অকালে পাক ধরতে পারে। অবশ্য পিআরপি চুল পাকা কমিয়ে দেয় এবং এ চিকিৎসা ব্যবস্থা পদ্ধতি এখন বাংলাদেশে চালু রয়েছে। এটি চুল পাকা কমিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে চুল পড়া বন্ধ করে। এটি চুলের ঘনত্বও বাড়ায়। এই সমস্যা রোধে আমাদের এক মাস পর পর তিনবার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

চুল পাকার আরো কিছু কারণ
ওপরের এসব শুধু নয় চুল পাকার আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন, কারো শ্বেতী বা ভিটিলাইহো রোগে শরীরের ত্বকের রং পরিবর্তনের সঙ্গে চুলের রংও পরিবর্তিত হতে থাকে। অ্যানিমিয়া, হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা, কোষ্ঠকাঠিন্য এসব রোগ অকালপক্বতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা রোগের কারণে সমস্যা হতে পারে। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, অল্প বয়সে পাকা চুল দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুব প্রয়োজন।

করণীয়
অকালপক্বতা রোধ করতে আমাদের কী কী করা উচিত, চলুন জেনে নেয়-

আগেই জানিয়েছি, বংশগত কারণে অকালপক্বতা দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে মেনে নেয়াই উত্তম। কারণ জেনেটিকের কারণে যে অকালপক্বতা, তাতে কোনো চিকিৎসায় তেমন ফলাফল পাওয়া যায় না। তবে এই ধরনের মানুষরা কাঁচা-পাকা চুলের বাড়তি যত্ন নিতে পারেন।

তবে সৌন্দর্য বাড়ানোর কথা না ভেবে, চুল ছোট শর্ট করতে পারেন। কৃত্রিম ডাই ব্যবহার না করে বেছে নিতে পারেন ন্যাচারাল ডাই। কারণ চুল বড় থাকলে অনেক সময় ভেতরে খুশকি থাকলেও বুঝা দুষ্কর। তাই চুল ছোট করে এর পরিচর্যা নেয়া শ্রেয়। তবে কীভাবে নিবেন পরিচর্যা? যেমন—মেহেদি বা জবা ফুলের নির্যাস। সাঁতারের সময় শাওয়ার ক্যাপ পরা জরুরি। কারণ, সুইমিংপুলের ক্ষতিকর কেমিক্যাল চুল ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এছাড়া চুলের শ্যাম্পু কন্ডিশনার নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। যেভাবে চুল খুশকিমুক্ত রাখা যায়, সেদিকে মনযোগী হতে হবে। আজকাল কিটোকোনাজল, সালফার, জিংকযুক্ত অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু পাওয়া যায়। এগুলোতে কন্ডিশনার থাকে।

সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চুলকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো।

খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে প্রোটিন, আঁশ, বায়োটিন, জিংক সমৃদ্ধ খাবার। প্রচুর পানি আর গাঢ় সবজি, রঙিন ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।

এছাড়া প্রতিদিন একটি আমলকী খেলে অকালপক্বতার ঝুঁকি কমে। এটি মেলানিন তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চুল পাকা শুরু করলে একটা দুশ্চিন্তা শুরু হয় যে, আমাকে আমার বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক দেখাচ্ছে। এই মানসিক চাপে আবশিষ্ট কাঁচা চুলগুলো দ্রুত পাকতে শুরু করে। তাই আপনার মেডিটেশন বা যোগব্যায়ামের সাহায্য নিতে পারেন। এতে রক্ত চলাচল বাড়বে। আর গোড়ায় পৌঁছে যাবে পুষ্টির উপাদান।

- Advertisement -

Read More

Recent