বৃহস্পতিবার - এপ্রিল ১৮ - ২০২৪

স্বপ্নপর্বের তিন কাহন : দুই

ছবি সিবাসটোন লিও পারদো

দৃশ্যটি থেকে ঋতু সরে গেলে স্বামীর পাশে এসে বসেন নুরনাহার বানু।
রাগের পরিবর্তে তার অবয়বে এখন কৌতুহল। ইতোমধ্যে বারান্দার আলো জ্বালানো হ’য়েছে।
তোমার কি শরীর খারাপ ?
না।
মন ? মন খারাপ ?
না।
এই সন্ধ্যাবেলা বাইরে না গিয়ে বারান্দায় মুরগী কোলে নিয়ে বসে আছ কেন ? মুরগী কোথায় পেলে ?
মুরগী কোথায় পাওয়া যায় ? বাজার থেকে কিনে এনেছি।
মুরগীর মাংশ খেতে ইচ্ছে করছে ?
না।
তাহলে ?
এই মুরগী কিছুদিনের মধ্যেই সোনার ডিম পারবে। তখন বুঝবে মুরগী কেন কেনা হ’য়েছে।
আবদুর রশীদ পাটোয়ারী ও নুরনাহার বানুর এই কথপোকথনের সময় মুরগী পুনরায় কক্ কক্ করে উঠলে তাঁদের কথা বাধাগ্রস্থ হয়।
নুরনাহার বানু স্বামীর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়াতে চান না।
বললেন, তুমি মুরগী মনে করে লাল ঝুটিঅলা যাকে কোলে নিয়ে বসে আছো, তাকিয়ে দেখ, তিনি আসলে একজন মোরগ। তার মাথায় সম্রাট আলেকজান্ডারের লাল ঝুটি। মোরগ ডিম পারে না। সোনার ডিম পারা তো দূর কা বাৎ হায়।
একথায় কিছুটা উদাসিন হ’য়ে ওঠেন আবদুর রশীদ পাটোয়ারী। বললেন, মোরগ হোক আর মুরগী হোক কথা একই।
একই মানে, মোরগ আর মুরগী এক কথা হ’ল ?
একই কথা। কারণ, মুরগী এখানে একটি প্রতীকমাত্র। এখন আমাকে বিরক্ত না করে আমার সামনে থেকে দূর হও।
নুরনাহার বানু কোন কিছুর সঙ্গে কোন কিছুই মিলাতে পারছেন না আর। তিনি স্বপ্ন দেখছেন না তো? কোন কোন সন্ধ্যায় ইদানীং এমন হচ্ছে। বাস্তব ব্যাপারগুলোকে স্বপ্ন মনে হয়। স্বপ্নগুলোকে বাস্তব! কেমন একটা ঘোর ঘোর লাগে। এই যেমন এখন লাগছে। তাঁর স্বামী আবদুর রশীদ পাটোয়ারী কি দিন দিন পাগল হ’য়ে যাচ্ছেন ?
ঋতু বললো, বাবা পাগল হবেন কেন ? তিনি ভালো আছেন। নাথিং রং উইথ হিম।
কী বলছো বৌমা ! দেখলে না, সন্ধ্যাবেলা তোমার শ্বশুর বাবাজি কোলের মধ্যে লাল ঝুটিওয়ালা একটি মোরগ নিয়ে বসে আছেন।
কী যে বলেন মা!
তাহলে আমি কি ভুল কিছু দেখলাম ? কী জানি, হবে হয়তো।

তখন অন্ধকার।
অমাবশ্যার রাত্রির কালো থাবা চারদিকে।
আমি ছুটছি। গন্তব্য : বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। নদী নালা খাল বিল বন-বাদার পেড়িয়ে অবশেষে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। এসে শুনি, কারা যেন বলাবলি করছে, পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে মাঝনদীতে আটকা পড়েছে ফেরি। আজ রাতে তো হবেই না, কাল সকালে ফেরির দেখা মিললেও মিলতে পারে। তখন তোমার শ্বাশুড়ি আম্মা, তিনি হঠাৎ দৃশ্যের ভিতর উদয় হলেন, বললেন, চলেন হেটে নদী পাড় হই।
আমরা পাটুরিয়া ঘাটে এসে উঠলাম। তারপর আবার ঢাকার পথে দৌড়।
রাস্তায় চেকপোষ্টে আমাদের থামানো হ’ল বারকয়েক। পকেটে যা ছিল দিয়ে দিতে হ’ল। এরপর যেন দোজখের পুলসিরাত, এটা পার হতে পারলেই আপাতত ঝামেলা শেষ। আমরা তখন শেরে বাংলা নগরের কাছাকাছি। হঠাৎ দেখি, আমার পাশ থেকে নুরনাহার বানু উধাও। অথচ সাতচল্লিশ বছর আগে যখন কোর্টে বিয়ে করি, তখন আমাদের মধ্যে ডিল হ’য়েছিল যে, আমরা বিপদে-আপদে কেউ কাউকে ছেড়ে যাবো না।
আম্মার এই কাজটি করা ঠিক হয়নি। ঋতু বলল, আই মিন, আপনাকে অই ভাবে একা ফেলে রেখে…
কথার মধ্যে বা’হাত দিও না বৌমা।

- Advertisement -

কোথায় যাচ্ছেন ? রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারেও কালো চশমা পড়া লোকটা জানতে চাইল। চেকপোষ্টে তার পাশে আরো চারজন।
বললাম, ঢাকা যাচ্ছি।
আপনি ঢাকায়ই আছেন।
ও।

(চলবে)

ইস্টইয়র্ক, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent