বৃহস্পতিবার - এপ্রিল ১৮ - ২০২৪

য়্যারোপ্লেনে লেখা ছড়া

ছড়া লিখবার ক্ষেত্রে আমার কোনো প্রাইম টাইম বলে কিছু নেই।
চব্বিশ ঘন্টার প্রতিটা মুহূর্তই আমার কাছে ‘রাইম টাইম’।
রাত তিনটা, ভোর পাঁচটা, সকাল সাড়ে দশটা, দুপুর আড়াইটা, বিকেল চারটা কুড়ি, সন্ধ্যে সাতটা, রাত্রি নটা কোনো ব্যাপার নয়। যত্রতত্র, যখন তখন, যেখানে সেখানে বসে বা দাঁড়িয়ে বা শুয়ে আমি ছড়া লিখতে পারি।
ছড়া লিখবার জন্যে নির্দিষ্ট কোনো ঘর বা চেয়ার টেবিল আমার লাগে না। বাংলাদেশে থাকার সময় বেশিরভাগ ছড়াই আমি লিখেছি সোফায় বসে ক্লিপবোর্ডে, ডায়নিং টেবিলের কোণায় বসে অথবা উপুর হয়ে বিছানায় শুয়ে কিংবা ফ্লোরে কার্পেটের ওপর শুয়ে বসে। কিংবা রেস্টুরেন্টের ভিড়-ভাট্টায় চা-কফি সিঙ্গারা-ডালপুরি খেতে খেতে।
দামি খাতা কিংবা ডায়েরিতে ছড়া লিখে সুবিধে করতে পারিনি।
শৈশব থেকেই আমি সব সময় ছড়া লিখেছি টুকরো কাগজে।
বাজারের ফর্দ, দোকানের ঠোঙা, সিগারেটের প্যাকেটের উল্টোপিঠ, সিনেমার টিকিট, বাস টিকিট, পেট্রোল পাম্পের রশিদ, দর্জির রিসিপ্ট কিংবা সস্তা নিউজপ্রিন্টের প্যাডেই লিখেছি বেশিরভাগ ছড়া।
পার্কে-অফিসে,ট্রেনে-বাসে-ইস্টিমারে-জাহাজে কিংবা বিমানে, আকাশে কিংবা পাতালে(বেসমেন্টে)বসে বসে প্রচুর ছড়া লিখেছি আমি।
হিউস্টনে নদী-ডেভিড-কিটো-ক্যাটবোর সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটিয়ে গতকাল ফিরছিলাম কানাডায়। আমার ফ্লাইট রুট ছিলো হিউস্টন-টরন্টো-অটোয়া। সকাল সাড়ে সাতটায় ফ্লাইট মানে পাঁচটায় রিপোর্টিং। হিউস্টন থেকে অটোয়ার বিমান যাত্রা বরাবরই বোরিং। প্রথমটা তিন ঘন্টার দ্বিতীয়টা এক ঘন্টার ফ্লাইট। এই ধরণের ফ্লাইটে খানাখাদ্যির ব্যাপারে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ভীষণ কিপ্টে। ছোট্ট এক গ্লাস জল কিংবা ছোট্ট এক কাপ কফি অথবা জুস-কোক এর সঙ্গে খুব সরু পাতলা ফিনফিনে দু’টো বিস্কুট কিংবা তার বদলে খুদে খুদে সাইজের আধমুঠো প্রিটজেল বরাদ্দ থাকে মাথা পিছু। সুতরাং ফ্লাইটটা মোটেও মজাদার নয়।
ঘন্টা দু’য়েক ঝিমান্তি টাইপের আলস্যে কাটানোর সময় এক পর্যায়ে ছড়ার একটা পঙ্‌ক্তি এসে কড়া নাড়লো করোটিতে। চোখ বন্ধ করেই পঙ্‌ক্তিটা আওড়াতে গিয়ে দেখি পরের পঙ্‌ক্তিগুলোও হুড়মুড় করে আসতে চাইছে। এই সময়টাকে অবহেলা করে বহু ছড়াকে হারিয়েছি চিরতরে। আর সেগুলো ফিরে আসেনি। সুতরাং আপসে ধরা দেয়া ছড়াটাকে পাকড়াও করতে ব্যাক পকেট থেকে পেন বের করে দেখি সঙ্গে কোনো কাগজ তো নেই! থাকার মধ্যে আছে পাসপোর্ট আর বোর্ডিং পাসটা। বোর্ডিং পাস-এর এক পিঠে ফ্লাইট এবং প্যাসেঞ্জার সংক্রান্ত টেকনিক্যাল সমস্ত তথ্য উপাত্ত। অন্যপিঠে এয়ারলাইন্সের নাম-লোগো ছাড়া পুরোটাই ফাঁকা। হুররে বলে লিখতে শুরু করলাম। এই সময়টায় এমনিতেই আমার নোটটা হয়ে থাকে শর্ট-হ্যান্ড ধরণের। পৃথিবীর অন্য কেউ পড়তেই পারবেন না এরকম হিব্রু ভাষায় ওটা রচিত হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময় চলমান বিমান কখনোই স্থির থাকে না। খুব নড়াচড়া করে। আর কানাডা-আমেরিকার রুটে চলাচলকারী বিমানগুলো খুব একটা বড় হয় না। ফলে কাঁপাকাঁপিটা স্বাভাবিক। হাতের লেখা সেই রকমের ভয়াবহ!
আকাশ পথে উড়ন্ত বিমানে ছড়াটা নাজেল হয়েছে বলে ক্ষিপ্র গতিতেই ওটা টুকে ফেলা গেলো। লিখবার সময় আমার সামনের প্যাসেঞ্জারের সিটের পেছনে আমার জন্যে চালু থাকা টিভি স্ক্রিনে দেখলাম এয়ার কানাডার বিমানটা তখন এলটিচ্যুড(সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা) দেখাচ্ছে ৩১ হাজার ৫০০ ফিট। ঘড়িতে স্থানীয় সময় সকাল ০৯টা ১০।
য়্যারোপ্লেনে বসে লেখা ছড়াটা পাঠকদের সমীপে পেশ করা হলো।
এটা নিছকই নিষ্পাপ সিরিজের ছড়া।
য়্যারোপ্লেনে লেখা ছড়া
লুৎফর রহমান রিটন
বাঁশ ঝাড়ে কী থাকে রে?– বাঁশ বাঁশ বাঁশ!
ঝিঁঝিঁ ডাক শুনতে কি– পাস পাস পাস?
পুকুরে সাঁতার কাটে– হাঁস হাঁস হাঁস!
ডাবের ভেতরে মজা–শাস শাস শাস!
কাশবনে শাদা শাদা– কাশ কাশ কাশ!
বৎসরে থাকে বারো– মাস মাস মাস!
ভুল পথে কেনো তুই– যাস যাস যাস!
ইশকুলে কানমলা– খাস খাস খাস!
কাতুকুতু লাগে বুঝি?– হাস হাস হাস!
সেল, মানে মূল্যটা– হ্রাস হ্রাস হ্রাস!
ভেবে দ্যাখ করতে কি– চাস চাস চাস?
বড় হয়ে কাটবি কি– ঘাস ঘাস ঘাস?
একশোতে তেত্রিশ?– পাশ পাশ পাশ!
তুই ফেল? চড় খাবি– ঠাস ঠাস ঠাস!

- Advertisement -

০৮ জুন ২০২২
আকাশ পথ, হিউস্টন টু টরন্টো
এলটিচ্যুড ৩১,৫০০ফিট
লোকাল টাইম সকাল ০৯টা ১০মিনিট

- Advertisement -

Read More

Recent