শুক্রবার - মার্চ ২৯ - ২০২৪

কেউ কথা রাখেনি

ছবিক্রিস্টোফার বিলোচ

ইদানিং নিশু আমাকে মাঝে মধ্যেই ফোন দেয়।আমিও এক নীরব শ্রোতা, তাই সে গল্প বলে যায় অবলীলায়। আজ তার পুরানো দিনের প্রেমের গল্প মনে পড়েছে, ও কিছুটা নষ্টালজিক।
: জানো, চট্টগ্রাম শহরে আমাদের বাসা ছিল পাহাড়ের উপর। বাংলো টাইপের বিশাল বাসা, অভাব ছিল না কোন কিছুরই। শুধু অভাব ছিল একজন হৃদয়বান মানুষের। কেন যেন বিশ্বাস করতে পারতাম না কাউকেই। কিন্তু কিভাবে কি হলো জানি না, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের নাটক করতে গিয়েই আটকা পড়লাম তোমার বন্ধুর জালে।
: কোন এক রোদেলা বিকেলের কথা। হিমু এসেছে আমাদের বাসায়। কেন যেন আজ তাকে খুব মায়াবী লাগছে। বিদ্যুৎ দীপ্ত চোখ আর সারা শরীরে তার আলোর ঝলক, এই বিকেলটাকে তাই অন্যরকম মনে হচ্ছে। কাজের মেয়েটা রুমে চা নাস্তা দিতে এসেছে। অবাক ব্যাপার আজ কাজের মেয়েটাও কেমন যেন একটু আড় চোখে তাকাচ্ছে। তাকে বলা হলো রুমের দরজাটা ভেজিয়ে দিতে আর না ডাকলে যেন ভেতরে না আসে।
: হিমু বেশ স্বস্তিতে এখন। চা শেষে সে তার খুব প্রিয় কবিতা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ আবৃত্তি করছে। ওর ভরাট গলায় এই কবিতাটি শুনতে আমারও বেশ ভাল লাগতো, বার বার শুনতে মন চাইত এবং শুনতাম।
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
না! হিমুর মাথা আকাশ ছোঁয়ার আর দরকার হয়নি। এক সময় ঘরের সব আলোর মিছিল স্তব্ধ হয়ে যায়, সমস্ত ঘর জুড়ে নামে নিকষকালো অন্ধকার। দু’জন মানব-মানবী তাঁদের সমস্ত সত্তা বিলীন করে দিয়ে হারিয়ে যায় অন্য এক মায়ার ভুবনে।
যখন তারা অন্য ভুবন থেকে বাস্তবে ফিরে আসে তখন নিশু বলে, ‘ইউ আর এ কমপ্লিট ম্যান।’ এই ছোট্ট দুটো ইংরেজি শব্দে নিশু কি বোঝাতে চেয়েছে হিমুকে তা আমাদের অজানা থাকলেও এটা আমরা জেনেছি যে ওরা হয়েছে জনম জনমের পথ চলার সাথী। হিমু তার ম্যাজিট্রেসি চাকরি ছেড়ে এসেছে কানাডায়, এসেছে তাঁর রোদেলা বিকেলের কাছে, এসেছে নিশুর কাছে।

উইন্ডসর, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent